চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুই গ্রুপের টার্গেট বস্তির ‘রাজত্ব’

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

২৯ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ

সরকারি জায়গা দখল করে চাক্তাই এলাকায় গড়ে ওঠেছে বিশাল বস্তি। অপরাধের আখড়া খ্যাত ভেড়া মার্কেট ও সীবিচ কলোনি বস্তি সাম্রাজ্যে রাজা ছিলেন আকতার হোসেন প্রকাশ কসাই আকতার। দুই মাস আগে একটি খুনের মামলায় আকতার এখন জেলে। তার সেই অপরাধ জগতের বিশাল সাম্রাজ্য দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তার কয়েক শিষ্য ও প্রতিপক্ষরা।

কর্ণফুলী নদীর তীরে রাজাখালী খাল সংলগ্ন সরকারি খাস জমি দখল করে কয়েক শ বস্তিঘর গড়ে ওঠে। কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং মাটি ভরাট করে এই বস্তি গড়ে ওঠে। এটি চাক্তাই ভেড়া মার্কেট বস্তি হিসেবে পরিচিত। সরকারি জায়গা দখল, বিক্রি, কলোনি বানিয়ে ভাড়া দিয়ে চলে আসছে ‘জমিদারি’ ব্যবসা। বিশাল এই অবৈধ রাজ্যের রাজা ছিলেন আকতার হোসেন প্রকাশ কসাই আকতার। বস্তিতে চলত মদ-জুয়ার আসর থেকে শুরু করে অপরাধ কর্মকান্ড। সবকিছুই চলত আকতারের ছত্রছায়ায়।

গত ১৭ অক্টোবর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহত হয় আবু তৈয়ব নামে এক মাঝি। চাঁদা না দেওয়ায় আকতারের নির্দেশে বেধড়ক পিটুনি ও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে আবু তৈয়বকে খুন করা হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন তার স্বজনেরা।

এই হত্যাকাণ্ডের  পরপরই গ্রেপ্তার হন কসাই আকতার ও তার সহযোগীরা। আকতারের সেই অপরাধ সাম্রাজ্য দখলে মরিয়া হয়ে ওঠেছে তার কয়েকজন শিষ্য ও প্রতিপক্ষ গ্রুপ। দুই গ্রুপের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। তাদের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কা বস্তিবাসীদের।

একাধিক বস্তিবাসী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আকতারের সহযোগী আবদুল্লাহ ও ফরিদের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন বস্তিতে ঢুকে বাসিন্দাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আটজনের নাম প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আকতারের দখলে থাকা ঘর ও জায়গা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। প্রতিরাতে হানা দিচ্ছে বস্তিতে। ইতোমধ্যে ভয় কয়েকজন পালিয়ে গেছে।

বস্তিবাসী সূত্র জানায়, বস্তির রাজা কসাই আকতার ছিলেন ওয়ার্ড যুবলীগের সহ-সভাপতি। চাক্তাই ভেড়া মার্কেট শ্রমজীবী কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতিও। আকতারের বাড়ি শিকলবাহা এলাকায়। বস্তি সাম্রাজ্য দখলে রাখতে তার বিশাল গ্রুপ ছিল। তার সহযোগীদের অনেকেই এখন কারাগারে। অনেকেই পালিয়ে গেছে। সেই সুযোগে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ অপরাধ সাম্রাজ্য দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ভেড়া মার্কেট বস্তিতে দীর্ঘদিন ধরে মদ-জুয়ার আসর থেকে শুরু করে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছে। এই অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে আকতারের প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার অবৈধ আয় ছিল। সেই অবৈধ আয় ও বস্তি সাম্রাজ্য দখলে নিতে এখন তার কয়েকজন সহযোগী ও প্রতিপক্ষ গ্রুপ মরিয়া হয়ে ওঠেছে।

স্থানীয়রা জানায়, বাড়িঘর ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রতিরাতে হামলা চালানো হচ্ছে। আকতারের মামলায় আসামি করার ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। পুলিশি ভয় প্রদর্শন করা হচ্ছে।

গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ভেড়া মার্কেট বস্তিতে আগুন লেগে নারী ও শিশুসহ আটজন নিহত হয়। অগ্নিকাণ্ডের পর জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সরকারি খাস জমি দখল করে বেড়া মার্কেট বস্তি গড়ে ওঠেছে। এ অবৈধ বস্তিতে পাঁচ হাজার ছিন্নমূল মানুষ বসবাস ছিল। ৪৮ জন সরকারি জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। অবৈধ দখলদারের হাত থেকে মূল্যবান জমি উদ্ধার করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। এখনো সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট