চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা রোগীদের ভরসাস্থল হয়ে ওঠেছে আল মানাহিল

নাজিম মুহাম্মদ 

২৮ নভেম্বর, ২০২০ | ৩:১৪ অপরাহ্ণ

নগরীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে বিশেষায়িত কক্ষে চিকিৎসা নিয়ে কয়েক লাখ টাকা বিল গুনেছেন ৯৫ বছরের বৃদ্ধ একে ফজলুল হক ও তার স্ত্রী। ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে অভিজাত হাসপাতাল ছেড়ে চিকিৎসা নেয়ার জন্য আশ্রয় নেন আল মানাহিল নার্চার হাসপাতালে। এ যাত্রায় বেঁচে উঠতে পারবে কিনা, অসুস্থ ফজলুল হকের মনে শঙ্কা ছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় অশীতিপর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।  এ ধরনের বহু অর্জনের দাবিদার সেবামূলক সংগঠন আল মানাহিলের।

চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ২০৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী এই হাসপাতাল থেকে বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত থাকায় করোনা নিয়ে মারা গেছেন ১১জন।  মহামারি করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আল মানাহিলের আরেকটি কাজের দায়িত্ব নেয় সেটি হল, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া নারী- পুরুষদের দাফনের ব্যবস্থা করা। এ পর্যন্ত ৯’শ ১৪ জনকে দাফন করে সেবামুখী সংগঠনটি। এই কাজ করতে গিয়ে জড়িত মানাহিলের তিনজন কর্মী অসুস্থ হন। কিন্তু হাসপাতালে প্রত্যক্ষভাবে চিকিৎসা সেবাপ্রদানকারী কোন ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী এখন পর্যন্ত অসুস্থ হননি।

দানশীল ব্যক্তিদের আার্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম সাগর তীরের হালিশহর ফুল চৌধুরী পাড়ায়  গড়ে উঠেছে  আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল। প্রায় ১২ কাঠা জমির উপর নির্মিত ছয়তলা ভবনটি নগরীর অবেহলিত ওই অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবার প্রদান ভরসাস্থল হতে পারে। প্রয়াত ব্যারিস্টার সলিমুল হক খান মিল্কির কন্যা নাসরিন বাকী জমিসহ ভবনটি দান করেছেন।

আলেম পরিবারের তিন সহোদর মাওলানা হেলাল উদ্দিন জমির উদ্দিন, মাওলানা শিহাব উদ্দিন ও মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বিন জমিরের হাত ধরে চলতি বছরের ৭ জুলাই যাত্রা শুরু করেছে  সেবামূলক হাসপাতালটি।

এপ্রিলের শুরুতে করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হন বেসামাল সেই পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালের পাশপাশি বেশ কয়েকটি ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে উঠে। এসব হাসপাতালের পাশাপাশি করোনা রোগিদের সেবার উদ্দেশ্যে আল মানাহিল হাসপাতালও কাজ শুরু করে। বেসরকারিভাবে গড়ে উঠা করোনা চিকিৎসার এসব হাসপাতাল রোগী সংকট কিংবা পরিচালনা করার মতো পরিস্থিতি না থাকায় ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

নগর পুলিশের সহযোগিতায় পতেঙ্গায় গড়ে তোলা বিদ্যানন্দ হাসপাতালটিও সর্বশেষ বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি আছে আল মানাহিল হাসপাতাল। সব বন্ধ হয়ে গেলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা পরিস্থিতির মোকাবেলায় প্রস্তুুতি নিয়ে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আল মানাহিল কর্তৃপক্ষ।  হাসপাতালটিতে বর্তমানে ২০ জন করোনা আক্রান্ত রোগি ভর্তি আছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাগরের  তীরঘেষে চলে যাওয়ায় টোল রোডের পাশেই ফুল চৌধুরী পাড়ার ছয়তলা ভবনটিকে  ৭৫ বেডের হাসপাতালে রূপ দেয়া হয়েছে। রয়েছে একটি অপারেশন থিয়েটার, অবজার্ভেশন ওয়ার্ড, নয়টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ আনুষাঙ্গিক চিকিৎসা প্রদানকারী সামগ্রী।

আল্লামা জমির উদ্দিন নানুপুরী ফটিছড়িতে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০১১ সালে  মারা যান। তাঁর সাত ছেলে এখনও একান্নবর্তী পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন। আল মানাহিল হাসপাতালের অন্যতম  প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা হেলাল উদ্দিন জানান, আমার মায়ের বয়স ৮৫ বছর পার হয়েছে। মুলতঃ মায়ের নির্দেশেই আমরা এ কাজে নেমেছি।  কোভিড আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি এই রোগে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাক- মুখ থেকে অক্সিজেন খোলা, গাড়িতে তোলা, জানাজা  পড়া ও দাফন করা যাবতীয় কাজও আমরা করছি। আমার ভাই আল্লামা ফরিদ্দ উদ্দিন জানাজার নামাজগুলোতে ইমামতি করে থাকেন।

মাওলানা হেলাল বলেন, নয়াবাজার, দেওয়ানহাট, কাট্টলী, বড়পুল, মুনির নগরসহ উপকূলীয় এ এলাকাটিতে কোন হাসপাতাল নেই। আমরা চেষ্টা করছি একটি পুর্ণাঙ্গ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার।  করোনাকালীন সময়ে আমরা রোগিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। একজন ওষধুপত্র, খাবার, চিকিৎসক-নার্সের বেতন সবমিলিয়ে হাসপাতালটিতে প্রতিমাসে প্রায় ১৬ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার এ চার মাসে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা হেলাল উদ্দিন জানান, খরচের সবই দানশীলদের আর্থিক সহযোগিতায় সম্ভব হচ্ছে। আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগিকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করে।

তিনি বলেন,  একটি আধুনিক পুর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস দানশীল ব্যক্তিরা সহযোগিতা করলে আমাদের কণ্টকাকীর্ণ চলার  পথ অনেকটা সুগম হতো। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিহতদের দেহ ভয়ে যখন কেউ স্পর্শ করছিল না তখনই আল মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসে, বলেন মাওলানা হেলাল উদ্দিন।

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট