চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

জানুয়ারি থেকে স্মার্ট মিটার

মোহাম্মদ আলী 

২৮ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

শুধু সিস্টেম লসে চট্টগ্রাম ওয়াসার বছরে ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা। মূলত নষ্ট মিটার, পাইপলাইন লিকেজ, অবৈধ সংযোগ ও দুর্নীতির কারণে সরকারি সেবা সংস্থাটি এ ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ক্ষতি কমাতে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছে ওয়াসা। প্রকল্পের অধীনে নগরীর দুইটি এলাকায় জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৩০০ স্মার্ট মিটার বসাবে সংস্থাটি।

নগরীতে ওয়াসার দৈনিক পানির চাহিদা ৪২ কোটি লিটার। এর বিপরীতে চট্টগ্রাম ওয়াসা সর্বসাকুল্যে উৎপাদন করে ৩৬ কোটি লিটার। এই উৎপাদিত পানির ২৫ শতাংশ (৯ কোটি লিটার) অপচয় হচ্ছে। তাতে গ্রাহক পর্যায়ে পানি যায় ২৭ কোটি লিটার। অভিযোগ রয়েছে, নষ্ট মিটার, পাইপলাইন লিকেজ, অবৈধ সংযোগ ও দুর্নীতির কারণে ওয়াসার সিস্টেম লস হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসার কতিপয় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ওয়াসার ‘সিস্টেম লস’ বেশি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওয়াসার দৈনিক উৎপাদিত ৩৬ কোটি লিটার পানির মধ্যে শেখ রাসেল (মদুনাঘাট) পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি লিটার, শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার (কর্ণফুলী-১)  ১৪ কোটি লিটার, মোহরা পানি শোধনাগার ৯ কোটি লিটার এবং গভীর নলকুপ থেকে ৪ কোটি লিটার। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কর্ণফুলী-২ প্রকল্প থেকে যুক্ত হবে আরো ১৪ কোটি লিটার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীতে ওয়াসার মোট সংযোগ রয়েছে ৮১ হাজার ৭১৭টি। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ৮৮৪টি আবাসিক ও ৭ হাজার ৮৩৩টি বাণিজ্যিক। মোট গ্রাহকের মধ্যে ৮৮ শতাংশ আবাসিক ও ১২ শতাংশ বাণিজ্যিক। বর্তমানে আবাসিকে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির মূল্য ১২ টাকা ৪০ পয়সা এবং বাণিজ্যিক ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। সেই হিসেবে আবাসিক হিসেবে এক কোটি লিটার পানির মূল্য পড়ে এক লাখ ২৪ হাজার টাকা। তাতে প্রতি দিন সিস্টেম লসে ক্ষতি (৯ কোটি লিটার) ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। মাসে ক্ষতি তিন কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। স্মার্ট মিটার বসানোর পাইলট প্রকল্পের তত্ত্বাবধানকারী চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব কর্মকর্তা ইরফান সাজ্জাদ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘পানির সিস্টেম লস কমাতে স্মার্ট মিটার বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক ও ওআর নিজাম আবাসিক এলাকায় তিন হাজার তিনশটি স্মার্ট মিটার বসানো হবে। সাড়ে তিন কোটি টাকার এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত দুইটি কোম্পাানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি দুইটি হচ্ছে, পদ্মা টেকনোলজি লিমিটেড ও পেপকো বাংলাদেশ লিমিটেড।

পরীক্ষামূলকভাবে তাদের থেকে ৫টি করে মিটার বসিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এগুলোর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে জানুয়ারি থেকে বসানো হবে স্মার্ট মিটার। এছাড়া সিস্টেম লস কমাতে গ্রাহক পর্যায়ে ওয়াসার ৯৪৮১টি নষ্ট মিটারের মধ্যে গত দুই মাসে ৫ হাজার মিটার পরিবর্তন করে নতুন দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট নষ্ট মিটার পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে।

এ প্রসঙ্গে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নগরীতে দৈনিক প্রায় ৪২ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সিস্টেম লসের কারণে উৎপাদিত পানির ২৫ শতাংশ অপচয় হয়। এই সিস্টেম লস কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তেমন সুফল পাইনি। পুরোপুরি তো সিস্টেম লস কমানো যাবে না। যেহেতু প্রায় সময়ই মিটার, পাইপ নষ্ট হয়। তবে এখন সিস্টেম লস সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে নগরীর দুইটি এলাকায় প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট মিটার বসানো হবে। এছাড়াও নগরীকে ১০১টি অঞ্চলে ভাগ করে মাস্টার মিটার দেওয়া হবে। আশা করি এরপর সিস্টেম লস কমানো সম্ভব হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট