চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চৌচালা সড়ক: ‘বিপদের বন্ধু’ই এখন বিপদে!

যানজট এড়িয়ে দ্রুত বিমান ­বন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ­পৌঁছার অন্যতম ভরসা

চৌচালা সড়ক: ‘বিপদের বন্ধু’ই এখন বিপদে!

‘চিটাগং আউটার রিং রোড ­প্রকল্প পেজ-২ এর আওতায় এই ­সড়কটির সংস্কারকাজ করা হবে’

তাসনীম হাসান

২৭ নভেম্বর, ২০২০ | ৭:২৬ অপরাহ্ণ

সড়কটির কাগুজে নাম চৌচালা সড়ক। কিন্তু সবার কাছে এখন এটির পরিচয় ‘বিপদের বন্ধু’ সড়ক। কারণ, শহরের বৃহত্তর অংশের মানুষের যানজট এড়িয়ে দ্রুত বিমানবন্দর ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছার অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে উত্তর-মধ্যম হালিশহরের বুক চিরে চিটাগং আউটার রিং রোডের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া ছোট্ট এই সড়কটি। কিন্তু সেই সড়কটিরই এখন দৈন্যদশা। প্রথম দেখায় মনে হবে- অজোপাড়া গাঁয়ের কোনো মাটির সড়ক।

চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে দৈনিক প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ হাজার ভারী যানবাহন বন্দরের ভেতরে আসা-যাওয়া করে। এছাড়া একই সড়কের পাশে থাকা দুটি ইপিজেডে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের আনা-নেওয়ার জন্য প্রতিদিন হাজারো গাড়ি এই সড়কে যাতায়াত করে। পাশাপাশি বিমানবন্দরেও প্রতিদিন হাজারো গাড়ি যাতায়াত করে। এসব কারণে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে বিমানবন্দর ও সমুদ্র সৈকতে যেতে কখনো দুই-আড়াইঘণ্টা লেগে যায়।

এই ভোগান্তি কমাতে নির্মাণ করা হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু এই উন্নয়নের ‘প্রসববেদনার’ কারণে বর্তমানে সিমেন্ট ক্রসিং থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে এখন ভোগান্তি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এসব কারণে এক্সেস রোড সংস্কার হওয়া ও চিটাগং আউটার রিং রোড চালু হওয়ার পর থেকে হালিশহরসহ মধ্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা দ্রুত বিমানবন্দর ও সমুদ্র সৈকতে পৌঁছতে চৌচালা সড়কটি ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি পতেঙ্গা থেকে স্বজনেরা দ্রুত রোগী নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে আসছেন এই সড়ক হয়ে। বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে অনেকের গাড়ি এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছে।

এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগ্রাবাদ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেটকারে করে এই সড়ক দিয়ে আউটার রিং রোড হয়ে বিমানবন্দরে যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। অন্যদিকে একই জায়গা থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায় আধাঘণ্টারও কম সময়ে।

হালিশহরের বড় পোল হয়ে বেশ কিছুদূর এগোলেই মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। ইনস্টিটিউটের আগে আগে হাতের বাম পাশে বন্দর টোল রোডের নিচ দিয়ে চলে যাওয়া সড়কটিই চৌচালা সড়ক। গতকাল বিকেলে সেই সড়কে দেখা যায়, প্রায় ২০ হাত প্রস্থের সড়কটির যেন কোনো অবসর নেই। একের পর এক ট্রাক, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা আর টমটম আসা-যাওয়া করছে। কিন্তু সব গাড়িই চলছে হেলেদুলে। কারণ সড়কের পিচ উঠে গেছে অনেক আগেই। কোথাও কোথাও ইটের খোয়ার অস্তিত্ব থাকলেও কৈইশ্যা পুকুর পাড় থেকে আউটার রিং রোড পর্যন্ত সড়কে মাটি ছাড়া কিছুই নেই। এই উঁচু এই নিচু সড়কটিতে তাই ধুলোর রাজত্ব থাকে দিনরাত। আউটার রিং রোডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জায়গাটি এতই ভঙ্গুর অবস্থায় আছে যে, যেকোনো সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী কমল বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, প্রায় এক বছর ধরে যানজট এড়িয়ে শর্টকাটে বিমানবন্দর ও সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সড়কটি। প্রতিদিন হাজারো গাড়ি চলায় এই সড়কটির অবস্থা এখন খুবই বেহাল। দ্রুত সংষ্কার করা জরুরি।

একই কথা বলেন সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক মোহাম্মদ ফারুক। তিনি যোগ করলেন আরও একটি সমস্যা। দিনরাত ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়ায় সড়কের দুই পাশের সবজিক্ষেতেও প্রভাব পড়ছে। কোথাও চারাগাছ মারা যাচ্ছে, কোথাও ফলন কম হচ্ছে।

অন্যদিকে পতেঙ্গার কাটগড় এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাহেদ বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ এবং বন্দর ও ইপিজেডের গাড়ির চাপের কারণে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সেখানে চৌচালা সড়কটি যাতায়াতে অনেকটাই প্রশান্তি দিয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে বিপদের বন্ধু নামে পরিচিত সড়কটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ হওয়ায় সবসময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে’।

তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) পরিকল্পনার মধ্যে এই সড়কটিও আছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। চিটাগং আউটার রিং রোড প্রকল্প পেজ-২ এর আওতায় এই সড়কটির সংস্কারকাজ করা হবে।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট