চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেই মিরসরাইয়ের হাসপাতালগুলোতে

এনায়েত হোসেন মিঠু, মিরসরাই

২৫ নভেম্বর, ২০২০ | ৩:৪৫ অপরাহ্ণ

দ্বিতীয় ধাপে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৯টি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মিরসরাই উপজেলা এলাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন উদ্যোগ নেই।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভা ও মিঠাছরা বাজার এলাকায় মোট ৯টি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক বাণিজ্যিকভাবে স্বাস্থ্য চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে মিরসরাই সদর এলাকার মাতৃকা হাসপাতাল, সেবা আধুনিক হাসপাতাল এবং হোপ মা ও শিশু হাসপাতাল; সুফিয়া রোড এলাকায় ভিডিসি মা ও শিশু হাসপাতাল; মিঠাছড়া বাজার এলাকায় মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতাল; বারইয়াহাট পৌর বাজার এলাকায় বারইয়াহাট জেনারেল হাসপাতাল, কমফোর্ট হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও বারইয়াহাট মেডিকেল সেন্টার। যার কোনটিতেই কোভিড রোগীর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নেই। নেই কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা। বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই সরকারের নতুন নিদের্শনা অনুযায়ী ফ্লু কর্নার, ট্রায়াজ সিস্টেম ও কোভিড রোগীদের জন্য আলাদা শয্যা সম্প্রসারণের।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি গত ২২ নভেম্বর বিকালে পূর্বকোণকে জানান, নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ সরেজমিনে বারইয়াহাট জেনারেল হাসপাতালে গেলে সেখানে এ ধরনের কোন প্রস্তুতির আভাসও পাওয়া যায়নি। আলাদা শয্যা, ফ্লু কর্নার ও ট্রায়াজ সিস্টেম দূরে থাক, কোভিড রোগীদের সরবরাহের জন্য সামান্য অক্সিজেন ব্যবস্থাও এখানে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আলাদা ফ্লু কর্নার বা ট্রায়াজ সিস্টেম করার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ অথবা উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবু আমরা সাধারণ হাঁচি-কাশির রোগী দেখছি’।

ওইদিন দুপুর ১২টা নাগাদ উপজেলার সুফিয়া রোড এলাকার ভিডিসি মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এখানেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। উদ্যোগ নেই সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়নে। হাসপাতালটির অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের মুখে যেমন মাস্ক নেই, দায়িত্বে থাকা অভ্যর্থনা কর্মকর্তার মুখেও মাস্ক নেই। হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় সেখানেও একই পরিবেশ, একই রকম পরিস্থিতি।

বিডিসি মা ও শিশু হাসপাতালের কর্ণধার মো. আলাউদ্দিন পূর্বকোণের কাছে দাবি করেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মা ও শিশুদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে ফ্লু কর্নার বা কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য আলাদা কর্নার এবং ট্রায়াজ সিস্টেম চালুর বিষয়ে আমরা কোন নির্দেশনা পাইনি’।

ওইদিন বিকাল ২টা নাগাদ মিরসরাই সদর এলাকার হোপ মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এখানে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানা হচ্ছে। তবে এখানেও ফ্লু সেন্টার বা ট্রায়াজ সিস্টেম করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অবশ্য এ ব্যাপারে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খালেদা আক্তার পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। তবে নতুন যে নির্দেশনা, এগুলো এখনো আমাদের দেয়া হয়নি। নির্দেশনা আসলে আমরা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিবো’।

বেসরকারি হাসপাতালের বেলায় নতুন ৯টি নির্দেশনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা মিটিং করে হাসপাতালগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছি। বিষয়টি আমরা সরাসরি গিয়ে তদারকি করবো’। স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফ্লু কর্নার, ট্রায়াজ সিস্টেম বা কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার্থে আলাদা শয্যা তৈরির মতো নির্দেশনা না পাওয়া বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখনো চিঠি দিয়ে তাদের জানাইনি। তবে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছি। শীঘ্রই তা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে আমরা তদারকি করবো।’

এদিকে মিরসরাই বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, ‘সরকারের তরফ থেকে আমরা এ ধরনের কোন নির্দেশনা পাইনি। তবে এখানকার হাসপাতালগুলো সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়াও জরুরি অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। এছাড়া আমরা হাসপাতাল মালিকেরা ইতোমধ্যে সমগ্র উপজেলায় বিনামূল্যে জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট