চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রাম কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় ৭ কারণে মারা পড়ছে হাতি

মোহাম্মদ আলী

২৫ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:২১ অপরাহ্ণ

৭ কারণে চট্টগ্রামসহ ৫ জেলায় বিগত পাঁচ বছরে ৫২টি হাতি মারা গেছে। একই সময়ে হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছে ৭০ জন। বসতঘর ও ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈদ্যুতিক শক, ছররা গুলি, মাইন বিস্ফোরণ, পানিতে ডুবে, পাহাড় থেকে পড়ে, রোগাক্রান্ত ও বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে হাতি মারা পড়ছে। মূলত আবাসস্থল ধ্বংস ও খাদ্যের জন্য লোকালয়ে নেমে আসার কারণে হাতি নিয়ে মূল সংকট তৈরি হয়েছে। এতে একদিকে মানুষের ফাঁদে পড়ে হাতি মারা পড়ছে, অন্যদিকে হাতির আক্রমণে নিহত হচ্ছেন মানুষ।

বছরের শেষের দিকে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে এ সমস্যা তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। সূত্র জানায়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির দৈনিক খাদ্যের প্রয়োজন হয় ১৫০ থেকে ২৫০ কেজি। একই সময়ে পানির চাহিদা ২০০ থেকে ২৫০ লিটার। কিন্তু বন উজাড়, শিল্পায়ন ও পাহাড় কাটার কারণে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস, চলাচলের পথ সংকোচন এবং খাদ্যের অভাবে বন্যহাতির পাল লোকালয়ে নেমে আসে। বিশেষ করে আমন ধান কাটার মওসুমে লোকালয়ে হাতি আসে বেশি। এতে নানাভাবে আক্রমণের শিকার হয়ে হাতি যেমন মারা পড়ছে, অন্যদিকে, হাতির আক্রমণে নিহত হচ্ছেন মানুষ।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস সূত্র জানায়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৫২টি হাতি মারা যায়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ২০টি, কক্সবাজারে ২১ এবং তিন পার্বত্য জেলায় ১১টি। অপরদিকে, একই সময়ে এসব জেলায় মানুষ মারা যান ৭০ জন। নিহতের মধ্যে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৪৩ জন, তিন পার্বত্য জেলায় ২৪ এবং কক্সবাজারে ৩ জন রয়েছেন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ এবং তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটির কাপ্তাই ও বান্দবানের লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় হাতির বিচরণ তুলনামূলক বেশি। এ কারণে আলোচ্য এলাকায় হাতির আক্রমণে মানুষ এবং মানুষের আক্রমণে হাতি মারা পড়ছে।’

দীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আবাসস্থল ধ্বংস ও খাদ্যের জন্য লোকালয়ে নেমে আসে হাতি। এ কারণে অনেকে ফসল রক্ষার জন্য বৈদ্যুতিক ফাঁদ ও গুলি করে হাতিকে। এতে হাতি মারা পড়ে বেশি। কিন্তু অনেকে জানে না হাতির আক্রমণে ফসল কিংবা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয় সরকার। হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে এককালীন একলাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এছাড়া আহত কিংবা পঙ্গু হলে ৫০ হাজার টাকা এবং ফসল ও সম্পদহানি হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। সুতরাং ফসল রক্ষার নামে ফাঁদ পেতে হাতি মারা ঠিক না। এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে গুরুতর অপরাধ।’

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে হাতি রয়েছে ২৬৮টি। এর আগে ২০০৪ সালে একই সংস্থার জরিপে সারাদেশে হাতি ছিল ২২৮ থেকে ৩২৭টি। মূলত বাংলাদেশে তিন ক্যাটাগরির হাতি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আবাসিক, অনাবাসিক ও ক্যাপটিভ। দেশের অভ্যন্তরে যেসব হাতি রয়েছে সেগুলোকে আবাসিক, সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশ ভারত ও মায়ানমার থেকে প্রবেশকারী হাতিকে অনাবাসিক এবং ব্যক্তি মালিকানায় লালন-পালন হওয়া হাতিকে ক্যাপটিভ বলা হয়। দেশের হাতি সংরক্ষণ, উন্নয়ন, বংশ বৃদ্ধি, আবাসস্থল বসবাস উপযোগী, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনগণকে সচেতন করে তুলতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে আইইউসিএন। ২০১৮ সাল থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তা চলবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, ‘হাতির পূর্ব পুরুষরা যে রুট দিয়ে হেঁটেছে হাতিরা ট্রেডিশনালি সে রুট দিয়ে হাঁটতে থাকে। আগে হাতির বসতি এলাকায় প্রচুর পাহাড় ছিল। বিভিন্ন গাছপালার মাধ্যমে পাহাড়ি একটা পরিবেশ ছিল। কিন্তু দিনে দিনে হাতির বসবাসের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ কারণে হাতির পাল খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ছুটে আসছে। পাহাড়ে যদি হাতি ঠিকমত খাবার পেত এবং বসবাসের জায়গা থাকতো তাহলে হাতি বারবার লোকালয়ে আসতো না।’

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট