চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

রমনা আবাসিক এলাকায় ওয়াসার পানি নেই

গোসলে ভরসা আত্মীয়ের বাসা

তাসনীম হাসান 

২৩ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

হালিশহরের রমনা আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখের একটি ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন মালিকদের একজন মাহাথির বিনতে সেলিম অরিতা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। কারো হাতে খালি কলসি আর জার। কারও হাতে কাপড়-চোপড়। এই নারী অন্য দুজনকে নিয়ে ছুঁটছিলেন প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের হালিশহর বি-ব্লকের নানার বাসায়। উদ্দেশ্যে গোসল সারা আর আধোয়া কাপড়-চোপড় ধোয়া। আর অবশ্যই ফেরার সময় কলসি ও জার ভর্তি করে পানি নিয়ে আসা।

গতকাল রবিবার বিকেল নামার মুখে দেখা গেল এই ভোগান্তির দৃশ্য। অবশ্য রমনা আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের কাছে এটি নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি না আসায় গোসল সারা আর কাপড়চোপড় ধুতে দূরের আত্মীয়ের বাসায় ছোটা তাঁদের প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শহরের মূল কেন্দ্রে অবস্থান হলেও রমনা আবাসিক এলাকার অবস্থা যেন গ্রামের চেয়েও খারাপ। মাসের পর মাস ধরে জীবনধারণের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান পানি না থাকায় অনেক ভবনই ভাড়াটিয়ার অভাবে খালি পড়ে আছে। যারা এখনো ভাড়াটিয়া হিসাবে আছেন তাঁদের দিনরাত কাটে পানির কষ্টে। ভাড়াটিয়া টানতে অনেক ভবন মালিক বাধ্য হয়ে গভীর নলকূপ বসাচ্ছেন।

রমনা আবাসিক এলাকায় ঢুকতেই দেখা গেল প্রায় প্রতি ভবনের সামনে ঝুঁলছে ‘টু লেট’ বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনে ধুলো পড়তে পড়তে কালো হয়ে গেলেও ভাড়াটিয়ার দেখা নেই। সেটিই উঠে এলো একটি ভবনের একাংশের মালিক মাইনুল আহসান মাসুদের কণ্ঠে। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, তাঁর ভবনে ৮টি ফ্ল্যাটই খালি। দিনের পর দিন পানি না আসায় অনেক ভাড়াটিয়া বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পানির জন্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে গভীর নলকূপ স্থাপন করছেন তাঁরা।

মাইনুল আহসানের ভবনের পাশের ভবনটা নুর মোহাম্মদ রানার। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছয় তলা ভবন তুললেও ভাড়া হয়েছে মাত্র একটি ফ্ল্যাট। আরেকটি ফ্ল্যাটে নিজের পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। বাকি ১০টা ফ্ল্যাটই খালি পড়ে আছে।

মো. আনোয়ার হোসেন ও আবদুল জলিল নামের আরও দুজন ভবন মালিককে পাওয়া গেল সেখানে। সবার মুখেই দুঃখের কথা। ক্ষোভ আর আফসোসের মিশেলে তাঁরা বলেন, ‘ভবন তুলে ফেলছি, ফেলে তো চলে যেতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে এখানে পড়ে আছি। পানি ছাড়া থাকা যায়? ঋণ নিয়ে ভবন তুলেছেন অনেকে। কিন্তু ভাড়াটিয়া না থাকায় ঋণও শোধ করতে পারছেন না।

ভাড়াটিয়া আর ভবন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ভ্যানে করে গভীর নলকূপ ও ওয়াসা থেকে সংগ্রহ করা পানি নিয়ে আসেন অনেকে। তাঁদের কাছ থেকে প্রতি ড্রাম পানি ১৫০ থেকে ২২০ টাকায় কিনে নেন তাঁরা। প্রতিটি বাসায় দিনে অন্তত দুই ড্রাম পানি লাগে। ফলে পানির পেছনেই অনেক টাকা চলে যাচ্ছে মালিক ও ভাড়াটিয়াদের।

বলতে বলতেই সেখানে ভ্যানে করে পানি নিয়ে আসে আবদুল্লাহ নামের এক কিশোর। সে ‘পানি লাগবে, পানি লাগবে’ বলে হাঁক ছাড়ছিল। আবদুল্লাহ জানায়, দিনে ৫-১০ ড্রাম পানি বিক্রি হয় তার। নিচের তলায় হলে এক ড্রাম পানি কলসি ভরে তুলে দিতে ১৫০ টাকা নেয়। আর উপরের তলায় হলে ২২০ টাকা করে নেয় সে।

রমনা আবাসিক এলাকা মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন ভূঁইয়া পূর্বকোণকে জানান, তাদের আবাসিকে ৩২০ জন মালিক রয়েছেন। আর সবমিলিয়ে বাসিন্দা আছেন প্রায় ৭ হাজার। মাঝে মাঝে অল্প পানি পাওয়। যায়। অথচ এই আবাসিক থেকে মাসে প্রায় আড়াইলাখ টাকা বিল পায় ওয়াসা। প্রায় ক্ষেত্রেই গড় বিল করা হয়। পানির জন্য অনেকবার ওয়াসার কাছে ধর্না দিয়েও কাজ হয়নি।

রমনা আবাসিকের শেষের প্রান্তের বাসিন্দাদের পানির কিছুটা সমস্যা আছে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, সেখানে উচ্চ চাপ প্রয়োগ করে পানি পাঠাতে হয়। আবার দেখা যায় উচ্চ চাপ প্রয়োগ করলে অন্যদিকের পাইপলাইন ফেটে যাচ্ছে। এর ফলে সপ্তাহে দুদিন পানি দিতে হচ্ছে। কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ চালু হলে আর এই সমস্যা থাকবে না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট