চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পানির কষ্ট কমবে জানুয়ারিতে

তাসনীম হাসান 

২১ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

বছরের পর বছর ধরে পানির কষ্টে আছেন চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফিরোজশাহ এবং বিশ্ব কলোনির লাখো বাসিন্দা। ঠিকমতো পানি না পেলেও মাস শেষে ওয়াসার পানির বিল আসতে ভুল হয় না। একসময় দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পানি পাবেন এই আশায় ব্যবহারের চেয়ে বেশি টাকা ওয়াসাকে দিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসীও।

এলাকার জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দুই কলোনিতে যেসব পাইপলাইন রয়েছে সেগুলো অনেক বছরের পুরোনো। ফলে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে পাইপলাইনগুলো। আবার এই দুই এলাকা নগরীর অন্যান্য জায়গার চেয়ে কিছুটা উঁচু। ওই দুর্বল পাইপলাইনের পক্ষে তাই সেখানে পানি তোলা দুঃসাধ্য ব্যাপার।  বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা রেশনিং ও টিউবওয়েলের মাধ্যমে এই দুই কলোনিতে পানি দিচ্ছে। কখনো সপ্তাহে দুদিন কখনো তিনদিন ধরে দেওয়া সময়ে পানি পান এলাকাবাসী।

এদিকে পানির দাবিতে অনেকবার মাঠেও নেমেছেন এলাকার বাসিন্দারা। জনপ্রতিনিধিরা অনেকবার ওয়াসাকে চিঠি দিয়েও পানির সমস্যার কথা তুলে ধরেন। অব্যাহত দাবির মুখে ওয়াসা ওই এলাকায় সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এর পুরোপুরি সুফল পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে বাসিন্দাদের। উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম পূর্বকোণকে বলেন, ‘দায়িত্বপালনকালে অন্তত ২০ থেকে ২৫ বার পানির সমস্যা মেটানোর জন্য ওয়াসাকে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি শত শত বাসিন্দা নিয়ে ওয়াসা ভবনও ঘেরাও করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ফলে দুই এলাকায় অন্তত লাখো মানুষ পানির ভোগান্তিতে আছেন। পানি না পেলেও পানির অতিরিক্ত বিল আসা কিন্তু বন্ধ নেই। এলাকাবাসী নানা সময়ে এই অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন।’

চট্টগ্রাম ওয়াসা বর্তমানে নগরের ৫৭ শতাংশ মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে পারছে। গ্রাহকদের মধ্যেও ১১ শতাংশ নিয়মিত পানি পান না; কিন্তু প্রতি মাসে বিল দিয়ে আসছেন। এই ১১ শতাংশের মধ্যে আছে বিশ্ব কলোনির এম, এন, ও, পি, জি ও এইচ ব্লকের বাসিন্দারাও।

বিশ্ব কলোনির জি ব্লকের বাসিন্দা জমির উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘মাসে ১ ইউনিট (প্রতি ইউনিট সমান ১ হাজার লিটার) পানিও পাই না। কিন্তু বিল দিতে হয় ৩০ ইউনিটের। মাসের পর মাস ধরে এভাবে বিল দিয়ে আসছি।’

সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবিদা আজাদ চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সদস্যও ছিলেন। ওয়াসাতে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বারবার বোর্ড সভায় উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে পানির সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরতেন। গতকাল যোগাযোগ করা হলে আবিদা আজাদ পূর্বকোণকে বলেন, এলাকার বেশিরভাগ পাইপ লাইনই পুরোনো। একদিকে পাইপ লাইনগুলো সংস্কার না হওয়া অন্যদিকে এলাকাটি কিছুটা পাহাড়ি হওয়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ওয়াসা ওয়ার্ডের ছয় কিলোমিটার মূল সড়কে পাইপলাইন স্থাপন করেছে। দ্রুত আন্তঃসংযোগ লাইন স্থাপন করে পানির সমস্যা মেটানো খুবই জরুরি।

ওয়াসা সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়নাধীন ‘চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট এন্ড স্যানিটেশন প্রজেক্টের (সিডব্লিউএসআইএসপি) অধীনে উত্তর পাহাড়তলীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। আন্তঃসংযোগ লাইন স্থাপন করা হলে ওই এলাকার বাসিন্দারা পানি পাবেন।

বিষয়টি জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম পূর্বকোণকে বলেন, জায়গাটি পাহাড়ি হওয়ায় সেখানে পানি তোলা কিছুটা কঠিন। গভীর চাপ প্রয়োগ করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে সেখানে পানি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি গভীর নলকূপ থেকেও এলাকাবাসীর ঘরে পানি যাচ্ছে।

আন্তঃসংযোগ লাইন স্থাপন কাজ শেষ হলে ওই এলাকায় পানির সমস্যা মিটবে বলে জানান মাকসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের মধ্যে এসব সংযোগ লাইন স্থাপন কাজ শেষ হবে। এরপর সমস্যা মিটবে। তবে ২৪ ঘণ্টা পানি পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট