চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আগামী সপ্তাহে শুরু কাঙ্ক্ষিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ

‘জোয়ারভীতি’ কাটবে গহিরাবাসীর

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

১৯ নভেম্বর, ২০২০ | ১:৩৩ অপরাহ্ণ

আনোয়ারার সাগরঘেঁষা গহিরায় এম্বুলেন্সযোগে বাড়ি নেওয়া হচ্ছিল এক ব্যক্তির মরদেহ। সাগরের নিষ্ঠুর আচরণ থেকে রেহাই পায়নি মরদেহটি। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের কারণে সাগরের কূলঘেঁষে যাচ্ছিল এম্বুলেন্সটি। কিন্তু বিধি-বাম। জোয়ারের পানিতে আটকে যায়। এম্বুলেন্স পানিতে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে খাটিয়ায় তুলে বাড়ি নেওয়া হয় মরদেহ। এটি চার মাস আগে কথা। তাই নয়, সাগরপাড়ের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের কারণে প্রতিনিয়ত এই ধরনের হাজারো বিপত্তিতে পড়তে হয় গহিরাবাসীকে। বেড়িবাঁধের জন্য এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিনের। অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে কাক্সিক্ষত বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আনোয়ারা ও পতেঙ্গা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করে আরও ২৫৭ কোটি টাকার সম্পূরক প্রকল্প নেওয়া হয়। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭৭ কোটি টাকা। এরফলে আনোয়ারা উপজেলা গহিরা এলাকা পুরোটাই বেড়িবাঁধের আওতায় আসছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর-১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ নয় প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ছয় প্যাকেজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এসব প্যাকেজের কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, বাকি তিন প্যাকেজের মধ্যে এক প্যাকেজের টেন্ডার কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে। অন্য দুই প্যাকেজের ডিজাইন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া যেতে একটু সময় লাগবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আনোয়ারায় উপকূলীয় এলাকা রয়েছে ১৩ কিলোমিটার। সাঙ্গু নদীর মোহনা থেকে রায়পুর ইউনিয়নের পারকি পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট অংশ এলাকাবাসীর জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো এলাকা সুরক্ষার জন্য প্রকল্পের আকার বাড়িয়ে সংশোধিত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে দুই দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা ও ৫টি রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে।

চলমান প্রকল্পে ৬৪ দশমিক ৩২৯ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, উচ্চতা উন্নীতকরণ করা হবে। ১১ দশমিক ৬৫২ কিলোমিটার নদীর তীর ও সী ডাইক সংরক্ষণ করা হবে। সংশোধিত প্রকল্পে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৩.৮০২ কি. মি। পানি নিয়ন্ত্রণে রেগুলেটর মেরামত ও নির্মাণ ৩৫টি থেকে বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪০ টি। ১৭.৬৯০ কিমি খাল পুনর্খনন করা হবে। পুরো প্রকল্পে ৬৭ হাজার গাছ রোপণ করা হবে।

পানির উচ্চতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরো এলাকায় ব্লক স্থাপন করা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না। তাই কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের পুরো অংশ এখন ব্লক বসানো হবে।

উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং ৬২ (পতেঙ্গা, পোল্ডার নং ৬৩/১এ আনোয়ারা ও পোল্ডার নং ৬৩/১বি (আনোয়ারা ও পটিয়া) বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৩২০ কোটি ৩০ লাখ টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। ২০১৬ সালের মে মাস থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্বাসনে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সালেও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৯ সালের আইলা এবং পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সালে বাঁধের সংস্কার করা হয়। তারপরও প্রতি বছর ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার-ভাটার কারণে প্রকল্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়। সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় প্রকল্পটি। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আনোয়ারার উপকূলীয় মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী অখিল কুমার বিশ্বাস পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা চাই টেকসই উন্নয়ন। চলমান প্রকল্পগুলোকে ঘিরে আগামীদিনে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। দ্রুত সময়ে মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট