চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোন পথে হেফাজত

মোহাম্মদ আলী 

১৬ নভেম্বর, ২০২০ | ১:৪৯ অপরাহ্ণ

জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে হেফাজতের নতুন আমির নির্বাচিত হয়েছেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। রবিবার হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় আয়োজিত সম্মেলনে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নতুন কমিটি ঘোষণার পর সংগঠনের দুই গ্রুপের কোন্দল প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় হেফাজতের অপর একটি অংশ পাল্টা বৈঠক করে নতুন কমিটি প্রত্যাখান এবং সম্মেলন অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছে। নতুন কমিটিকে প্রত্যাখানকারীরা সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফী’র অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ কারণে হেফাজতের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  মূলত বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা-ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রতিনিধি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংগঠনটিতে আবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। সংগঠনটির সাবেক আমির মরহুম আহমদ শফীর অনুসারীরা এই সম্মেলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ থেকে হেফাজতে ইসলামকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দেয়া  হয়েছে। তবে তাদের বিরোধীরা রবিবার প্রতিনিধি সম্মেলন করে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, সম্মেলনের আগের দিন শফীপন্থীরা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জামায়াত-শিবিরের প্রেতাত্মারা হত্যা করেছে বলে দাবি করেন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কাউন্সিল বন্ধের দাবি জানানো হয়।

একইদিন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, একটি চিহ্নিত মহল হেফাজতে ইসলামকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের এ দাবির প্রতি পাত্তা না দিয়ে প্রতিনিধি সম্মেলন সম্পন্ন করে জুনায়েদ বাবুনগরী অনুসারীরা। জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নিয়েই হেফাজতের অপর অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

জানতে চাইলে হেফাজতের অপর অংশের নেতা এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘যারা প্রতিনিধি সম্মেলন করেছেন তারা হেফাজতের কেউ নন। এ সম্মেলন অসাংবিধানিক। আমরা এটি প্রত্যাখান করছি।’

নতুন করে কোন কমিটি গঠন করবেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘বর্তমানে আমরা বৈঠকে আছি। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে এ বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘যিনি (মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী) কাউন্সিল আহ্বান করেছেন, তিনি হেফাজতের কেউ নন। তিনিতো হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, এমনকি হেফাজতের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী নন, সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মহাসচিব এই সম্মেলন ডেকেছেন এবং নতুন কমিটি করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম গঠিত হয়। যদিও পরে অরাজনৈতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা এ সংগঠনটি দেশের রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট