চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মেলায় ব্যাপক চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ এপ্রিল, ২০১৯ | ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ

জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলায় দোকানিদের কাছ থেকে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূল অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক দোকানি মেলার শুরুতেই দোকান গুটিয়ে চলে গেছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা জৌলুস হারিয়ে ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সাথে বৈঠকে বসার চিন্তা করছে জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদ।
সরেজমিন মেলা পরিদর্শনকালে অসংখ্য বিক্রেতা পূর্বকোণকে অভিযোগে বলেন, এবার তাদের জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার অভিজ্ঞতা ভাল নয়। দুই ফুট বাই তিন ফুটের একটি দোকানের জন্য চাঁদা দিতে হয়েছে দুই হাজার টাকা। আর দোকান একটু বড় হলেই তা পাঁচ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ‘ভাড়া’র নামে এই চাঁদা না দিলেই দোকান তুলে দিচ্ছে। তাই নিরুপায় হয়ে তারা চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করেছেন। জমিলা খাতুন নামে এক বিক্রেতা বসেছেন সিএমপি সদরদপ্তরের বিপরীত পাশে সড়কের আইল্যা-ের পাশে। তিনি জানান, গত বছর ১৫ হাজার টাকার পণ্য এনে ব্যবসা করে লাভবান হয়েছিলেন। এবার ৩০ হাজার টাকার পণ্য এনেও পোষাতে পারছেন না। কারণ এবার খরচ বেশি। তিনি ‘ভাড়া’ দিয়েছেন দুই হাজার টাকা। আর দৈনিক ‘লাইট খরচ’ একটি বৈদ্যুতিক বাতির ভাড়া ২০০ টাকা। তাছাড়া নিজেদের খাওয়া-দাওয়া, আসা-যাওয়ার আনুষাঙ্গিক খরচতো আছেই। বক্সিরহাট মোড়ে ফুলের ঝাড়– বিক্রেতা নুর হোসেন একেকটি ঝাড়–র দাম ১০০ টাকা চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলায় এখন খরচ বেড়ে গেছে। ক্রেতার কাছ থেকে আদায় না করলে কিভাবে তা পোষাবেন।
একাধিক দোকানি পূর্বকোণকে জানান, তারা যেসব দোকানের সামনে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন, সেসব দোকান এবং মার্কেটের পক্ষ থেকে এক দফা ভাড়া আদায় হয়েছে। পুলিশের লোক সিভিল ড্রেসে এসে আরেক দফায় ভাড়া আদায় করেছে। আবার রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও ভাড়া আদায় করেছে।
জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সাবেক কাউন্সিলর মো. জামাল হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, মেলার আয়োজন বা নিয়ন্ত্রণে বলী খেলা আয়োজক কমিটির কোন ভূমিকা ছিল না। দূর-দূরান্ত থেকে যারা নানা পণ্যের পসরা নিয়ে মেলায় এসেছে তাদের কাছ থেকে ভাড়ার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজির কথা তারাও শুনেছেন উল্লেখ করে বলেন, এটা কখনোই কাম্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এক সময় এই মেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
কোতোয়ালী মোড় থেকে আন্দরকিল্লা, অপরদিকে জেল রোডের কিছু অংশ, সিনেমা প্যালেস মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত এই মেলায় কয়েক হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে। নানা মুখরোচক খাবার থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পণ্য সবকিছুই এই মেলায় পাওয়া যায়। সব শ্রেণির মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই মেলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রেতায় ঠাসায় থাকে। গতকাল শনিবার ছিল মেলার শেষ দিন।
জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারি পূর্বকোণকে বলেন, এবারের মত চাঁদাবাজি আর কখনো হয়নি। তার কাছেই পাঁচ শতাধিক অভিযোগ এসেছে উল্লেখ করে বলেন, অনেক দোকানি অতিষ্ঠ হয়ে দোকান গুটিয়ে চলে গেছে। যারা যায়নি তারা আগামী বছর আসবে কিনা সন্দেহ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখানে এসে গাড়ি থেকে মাল নামানোর সময়ই চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর দোকান সাজানো থেকে শুরু করে পণ্য বিক্রির সময়ও টাকা দিতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ঐহিত্যবাহী এই মেলা টিকবে না। কারণ মেলার প্রাণ হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম শহর এবং আশপাশের মানুষ তাদের কাছ থেকে গৃহস্থালিসহ নানা পণ্য কেনার জন্য এখানে আসেন। কিন্তু সেই ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করা ফেলায় আগামীতে মেলার জৌলুস নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ পূর্বকোণকে বলেন, কাউকে চাঁদা না দেয়ার জন্য আয়োজক কমিটির মাইকের মাধ্যমে আধা ঘণ্টা পর পর ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কেউ চাঁদা চাইলে পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ অভিযোগ করেনি। উদযাপন পরিষদ যদি সিএমপি’র সাথে বসে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কারণ ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় চাঁদাবাজি হওয়া কোনভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া পুলিশের কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট