চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সরবরাহ বাড়লেও কমেনি সবজির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১৩ নভেম্বর, ২০২০ | ৪:৪৩ অপরাহ্ণ

পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও নগরীর বাজারগুলোতে কমছে না সবজির দাম। যদিও কৃষক পর্যায়ে ও পাইকারি বাজারে দাম কমছে সবজির। প্রতিটি সবজি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বাড়তি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার আরমান মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে মাঝখানে সবজির চাষ ভালো হয়নি। ক্ষেতেই ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই সবজির দাম বেড়েছিল। জমিতে এখন বেশ ভালো সবজির চাষ হচ্ছে। উৎপাদনও ভালো হয়েছে, সরবরাহ বেড়েছে আর দামও কমেছে। কিন্তু নগরীতে কেন দাম কমছে না জানি না। আমদানিকারকরা আমাদের কাছ থেকে অল্প দামেই সবজি নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ফুলকপি, বাঁধাকপি পিস হিসেবে বিক্রি করি। এক পিস ফুলকপি ১০ টাকায়, বাঁধাকপি ৮ টাকায় বিক্রি করছি। মুলা, টমেটো, কাঁচামরিচসহ এসব সবজিগুলো মণ হিসেবে বিক্রি হয়। এসবেরও দাম কমেছে।

নগরীর পাইকারি বাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদাররাও বলছেন, দীর্ঘ ছয়-সাত মাস আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। কিন্তু খুচরা বাজারে দেখছি এখনো বেশি। এটা একান্ত তাদের বিষয়। আমরা কৃষকদের থেকে যেভাবে ক্রয় করি পাইকারিতে সে হিসেবেই বিক্রি করি। তবে শীতের নতুন সবজি যেমন শিম, গাজর, টমেটো ও মুলার দাম পাইকারি বাজারেও বেশি। কিন্তু খুচরা বাজারে পাইকারি দামের তুলনায় অতিরিক্ত দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে।

একরামুল হক নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সবজির দাম কমেছে। তবে শীতকালীন সবজি হিসেবে যেভাবে কমার কথা সেভাবে কমেনি। আগের চেয়ে শীতকালীন সবজির সরবরাহও বেড়েছে। সামনে শীতকাল আসছে। আশা করছি সবজির দাম কমবে।

সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর চকবাজার ও বহদ্দারহাটে দেখা যায় ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না কোনো সবজি। বেশ অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে বাজারগুলোতে। সবজির দাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলেই বিক্রেতারা ‘নিলে নেন, না নিলে যান’ বলেই ক্রেতাদের জবাব দিচ্ছেন। গতকালের বাজারে এক কেজি মুলা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়, টমেটো ১শ’, গাজর ১২০ টাকায়, আলু ৪৫ টাকায়, ফুলকপি ১শ’ টাকায়, বাঁধাকপি ৮০ টাকায়, কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৫০ টাকায়, শিম ১শ-১১০ টাকায়, বেগুন ৭০-৮০ টাকায়, পটল ৮০ টাকায়, বরবটি ৮০ টাকায়, তিতাকরলা ১শ’ টাকায়, কচুরছড়া ৬০-৭০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৮০ টাকায়, ঝিঙে ৯০ টাকায়, ঢেঁড়শ ১শ’ টাকায়, লাউ ৫০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ো ৬০ টাকায়, পেঁপে ৫০ টাকায় ও শসা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এসব সবজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ সবজির উপর সরকারি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি বাজারে আবার বিতর্কিত দামও রয়েছে। সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে ও লাউ। এছাড়া চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবরকম শাক। ২৫ টাকার নিচে নেই কোনো শাকের আঁটি। লালশাক এক আঁটি ৩০ টাকা, লাউ-কুমড়ো শাক ৩৫ টাকা, মুলা ও কলমি শাক ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম কমেছে পেঁয়াজের। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। পাকিস্তানি ৫০, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ ও মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। অপরিবর্তিত রয়েছে রসুনের দাম। রসুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায় ও আদা ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। লিটারে ১০ থেকে  ১৫ টাকা বেড়েছে তেলের দাম। বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১শ’ থেকে ১০৫ টাকায়। খোলা এক নম্বর সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়, খোলা সুপার বিক্রি হচ্ছে ১০২ টাকায়।

বাজারে আসা আসমা বেগম নামের এক ক্রেতা বলেন, আয়ের চেয়ে খরচ বেশি। শহরে এখন খেয়ে-পরে বাঁচা দায় হয়ে যাচ্ছে। আমরা মধ্যবিত্তদের মরণ এখন। বাজার করতে এসে এখন সবচেয়ে কম দামের সবজিটা খুঁজি। কোনো রকমে খেয়ে বাঁচা মাত্র। শাকের দাম আর সোনার দামও যেন একই।

দাম কমেছে মাছের। বাজারে বেশ ভালো রকমের দেশীয় ও সামুদ্রিক মাছ দেখা যায়। ইলিশ আকার ভেদে কেজি ৩শ’-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে পাঁচশ টাকা, আইড় মাছ ২৫০ টাকায়, কোরাল মাছ সাড়ে ৫শ’-৫৫০ টাকায়, চৌক্কা ১৫০-১৮০শ’ টাকা, লইট্যা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকায়, বাড়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়, পাবদা ৪শ’, সামুদ্রিক চিংড়ি ৩শ’ থেকে আকার ভেদে ৫শ’ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় পুকুরের চিংড়ি সাড়ে ৪শ’ টাকায়, পাঙ্গাস ৯০ থেকে ১শ’ টাকায়, তেলাপিয়া ১শ’ থেকে ১২০ টাকায়, রুই ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়, কাতল ১শ’ থেকে ১২০ টাকায়, কৈ সাড়ে ৪শ’ টাকায় ও শিং ৫শ’, পোয়া মাছ আড়াইশ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রয়লার মুরগি। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ১৯০ থেকে ২শ’ টাকায়। হাড় ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬শ’ টাকায়, হাড়সহ সাড়ে ৫শ’ টাকায় ও খাসির মাংস ৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট