চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রতি ট্রাকে দুই টন পেঁয়াজ ­বিক্রি হচ্ছে না অর্ধেকও

টিসিবি’র পচা পেঁয়াজে বিমুখ ক্রেতা

অবিক্রিত পেঁয়াজ যাচ্ছে পাইকারি বাজারে

আল-আমিন সিকদার

১৩ নভেম্বর, ২০২০ | ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

পচা ও ওজনে কারচুপির অভিযোগ ওঠেছে টিসিবি’র (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) ন্যায্য মূল্যের পেঁয়াজে। তিন কেজি পেঁয়াজ কিনলে তারমধ্যে আধা কেজিই পচা পড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। অর্থাৎ ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ক্রেতাকে প্রকৃতপক্ষে কিনতে হচ্ছে ৩৬ টাকায়।
পচা ও ওজনে কারচুপির কারণে টিসিবি’র পেঁয়াজ কেনায় অনীহা দেখা দেয়ায় একেকজন ডিলার দিনে পাঁচশ কেজি পেঁয়াজও বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ তাদেরকে দৈনিক সরবরাহ করা হয় দুই হাজার কেজি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রতিদিন অবিক্রিত থাকা দেড় হাজার কেজি পেঁয়াজ ডিলাররা পাইকারি বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। গতকাল সকালে নগরীর পতেঙ্গার স্টিলমিল মোড়ে টিসিবি’র পেঁয়াজ বোঝাই একটি মিনি ট্রাককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু পুরো দুই ঘণ্টায় ওই ট্রাক থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে হাতেগোনা ১৫ জন। যেখানে দেশিয় পেঁয়াজ বাজারে এখনো ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ভারত ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেখানে ৩০ টাকায় টিসিবির পেঁয়াজ পেয়েও ক্রয় করছেন না ক্রেতারা। কারণ, বাজারেও টিসিবির সমমানের পেঁয়াজগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
স্টিলমিল বাজারের একটি খুচরা দোকান থেকে পেঁয়াজ কিনে বাসায় ফিরছিলেন রিকশাচালক আলম। পাশেই টিসিবির পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও কেন কিনলেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে এই ট্রাক থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ৩ কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলাম। যাওয়ার পথে দেখি একই ধরণের পেঁয়াজ ফুটপাতের ভ্যান গাড়িগুলোতে বিক্রি করছে ৩০ টাকায়। তারপরেও সেখান থেকে বেছে বেছে নেয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু টিসিবির ট্রাক থেকে এ সুযোগ নেই। ওইবার ৩ কেজি পেঁয়াজের মধ্যে আধাকেজিরও বেশি ছিল পচা। ওজনেও ছিল ১০০ গ্রাম কম। এরপর বাসা থেকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে টিসিবির পচা পেঁয়াজ না কিনতে। আজ বাজার থেকে একই ধরণের কিন্তু ভালো মানের পেঁয়াজ কিনেছি ৩০ টাকায়’।
পেঁয়াজে পচা পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন টিসিবির বেশ কয়েকজন ডিলার। বলেছেন, লোকসান কমাতে অবিক্রিত পেঁয়াজ পাইকারি বাজার বিক্রির কথাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রতিদিন ২ টন পেঁয়াজ পাই টিসিবি থেকে। এরমধ্যে ওজনেও কম থাকে কমপক্ষে ৩০ কেজি। প্রায় ২০০ কেজির মতো পড়ে পচা ও নরম পেঁয়াজ। এরপরে চীনের এসব পেঁয়াজ আমরা যে দরে বিক্রি করছি একই দরে বিক্রি করছে ফুটপাতের দোকানগুলো। তার উপর আমাদের কাছ থেকে বেছে কেনার সুযোগ না থাকায় নিম্ম আয়ের মানুষগুলো ফুটপাত থেকেই পেঁয়াজ কিনছে। গত এক সপ্তাহে গড়ে অর্ধেক পেঁয়াজও বিক্রি করতে পারিনি। প্রতিকেজি পেঁয়াজ আমরা টিসিবি থেকে ক্রয় করছি ২৫ টাকা দরে। যদি এক হাজার কেজি অবিক্রিত থেকে যায় তাহলে ২৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়। এতটাকা লোকসান দেয়া সম্ভব নয় বলে অনেকেই অগোচরে খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তগুলোতে বিক্রি করে দিচ্ছে।’
তবে, চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি না হলেও পঁচা পেঁয়াজের কারণে ক্রেতা সংকট তৈরি হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের টিসিবির ডিলার সমিতির সভাপতি মো. রাশেদ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা ২৫ টাকা করে ২ টন পেয়াঁজ পাচ্ছি টিসিবি থেকে। বিক্রি করছি ৩০ টাকায়। পচা থাকার কারণে কেউ আর টিসিবির পেঁয়াজ ক্রয় করতে চাচ্ছে না। কারণ, একই দামে একই ধরণের পেঁয়াজ বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে। টিসিবি’র এসব পেঁয়াজ বিক্রি করতে হলে দাম ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে আনতে হবে এবং ভালমানের পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে’।
টিসিবি’র চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম খান পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ বন্ধের পর সরকার ভর্তুকি দিয়ে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে নগরীর ১৬টি পয়েন্টে আমাদের পেঁয়াজ বিক্রি করছে ডিলাররা। তবে পচা পেঁয়াজ এবং ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি সত্য নয়’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট