চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

মিরসরাইয়ের হার না মানা পাঁচ জয়িতার গল্প

মিরসরাইয়ের হার না মানা পাঁচ জয়িতার গল্পগাথা

এনায়েত হোসেন মিঠু

১২ নভেম্বর, ২০২০ | ৫:২৮ অপরাহ্ণ

তারা জীবনের জন্য অনবরত সংগ্রাম করেছেন। বৈরী সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ে গেছেন জীবনভর। পথের শত প্রতিকূলতাকে তারা জয় করেছেন। এ গল্প মিরসরাই উপজেলায় জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া পাঁচ সফল নারীর। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর তাদেরকে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মানে ভূষিত করেছেন।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মেহের আফরোজ পূর্বকোণকে জানান, শ্রেষ্ঠ জয়িতা ২০১৯ এ ভূষিত মিরসরাইয়ের পাঁচ নারী হলেন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনে হালিমা বেগম, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে জয়নব ফেরদৌস আরা চৌধুরী, সফল জননী খালেদা পারভীন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী শিউলি রানী পাল ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা জাহানারা বেগম।

হালিমা বেগম: বিয়ের ১১ বছরে ১৯৯৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী হারান হালিমা বেগম। সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অভাব সঙ্গী হয় তার। ঘরে বসে বেত ও বাঁশের কাজ করে সংসারের হাল ধরার প্রাণান্ত চেষ্টায়ও দু’ বেলা খাবার জোটে না। এরপর সেলাইয়ের কাজ শিখে গ্রামের বিভিন্ন পরিবার ও দোকানপাটে জামা কাপড় সাপ্লাই করে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেন। বড় দুই মেয়েকে এসএসসি পাস করিয়ে বিয়ে দেন। একমাত্র ছেলে বর্তমানে দর্শনশাস্ত্রে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। তার বাড়ি উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় গ্রামে।

জয়নব ফেরদৌস আরা চৌধুরী: উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সাহেবপুর গ্রামে বেকার বাবার ঘরে জন্ম জয়নব ফেরদৌস আরা চৌধুরীর। অষ্টম শ্রেণি পাস করেই শুরু করেন প্রাইভেট টিউশন। অনেক কষ্টে এসএসসি পাস করে ২০০৩ সালে স্থানীয় একটি কমিউনিটি স্কুলে সহকারী শিক্ষকের চাকরি নেন। চাকরির পাশাপাশি পড়াশুনাও চালিয়ে যান। ২০১২ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। নিজের আয়ে তিনি ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চালান। তার ছোট ভাই বর্তমানে খুলনা মেডিকেলে এমবিবিএস অধ্যয়নরত।

খালেদা পারভীন: মিরসরাই পৌরসভার পূর্ব পোলমোগরা গ্রামের খালেদা পারভীন সংসার জীবন শুরু করেন ১৯৯০ সালে। স্বামীর আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। বিয়ের আট-নয় বছর সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার স্বামী। তিন মেয়ে আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয় তাকে। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রবল ইচ্ছাশক্তিই তাকে সফলতার মুখ দেখিয়েছে। খালেদা পারভীনের বড় ও মেঝ মেয়ে ডাক্তার। দ্বিতীয় মেয়ে বর্তমানে স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিসিএস সম্পন্ন করেছে। আর ছোট মেয়ে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে গণিতে বিষয়ে অনার্স অধ্যয়নরত।

শিউলি রানী পাল: মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের শিউলি রানী পালকে স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হয়। তখন তার সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান। আর্থিক অনটনে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জীবন। সংসার চালাতে সেলাইয়ের কাজ শিখেন। পরে নিজের ভাইয়ের টাকায় একটি সেলাই মেশিন কিনে কাপড় সেলাই শুরু করেন। বর্তমানে তিনি আর্থিকভাবে ভালো আছেন।

জাহানারা বেগম: কিশোরী বয়স থেকে সমাজসেবার শখ জাহানারা বেগমের। ১৯৮০ সালে তার বিয়ে হয় নিজ গ্রামে। বিয়ের পরও সমাজসেবাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এ সুবাদে ১৯৮৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় মায়ানী ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। এলাকাবাসীর কাছে জাহানারা বেগম জানু আপা হিসেবে পরিচিত ও সর্বস্তরে তিনি জনপ্রিয়। পরপর ৬ বার তিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। অদ্যাবধি তিনি মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছর দায়িত্ব পালন করছেন।

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট