চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সংকটে দুর্বল প্রাণিসম্পদ দপ্তর

এখনও ৭২ সালের জনবল কাঠামো

ইফতেখারুল ইসলাম

১২ নভেম্বর, ২০২০ | ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ

  • গবাদিপশু চিকিৎসক সংকটে চট্টগ্রামের খামারিরা
  • অনুমোদিত জনবলের প্রায় ৩১ শতাংশ পদ শূন্য
  • ৬ বছরে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি
  • ফোনে সম্ভব হয় না পশুর যথাযথ চিকিৎসা

গবাদিপশুর চিকিৎসক সংকটে চট্টগ্রামের খামারিরা। প্রয়োজনের সময় চিকিৎসক মিলে না। গবাদি পশু লালন-পালনের হার প্রতিনিয়ত বাড়লেও যথাসময়ে চিকিৎসক না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। অনেক সময় টেলিফোনে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় প্রাণ যাচ্ছে মূল্যবান গরু-ছাগলের।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চলছে ১৯৭২ সালের জনবল কাঠামো দিয়েই। প্রতিবছর চট্টগ্রামে গবাদিপশু এবং গরুর দুধ উৎপাদন বাড়লেও জনবল বাড়েনি। বরং অনুমোদিত জনবলের প্রায় ৩১ শতাংশ পদ শূন্য পড়ে আছে। সম্প্রতি সারাদেশের জন্য একটি জনবল কাঠামো অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়। তাতেও উপজেলা এবং থানাভিত্তিক কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। প্রতি দুই ইউনিয়নের জন্য একজন করে ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিসটেন্ট দেয়া হচ্ছে। তবে জেলা পর্যায়ে একজন প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, একজন ভেটেরিনারি সার্জন, একজন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা(স্বাস্থ্য) এবং একজন ফেরিও জেনেলজিস্ট দেয়া হবে।
একাধিক খামারির সাথে আলাপকালে তারা জানান, চট্টলদরদী দৈনিক পূর্বকোণের চেয়ারম্যান মরহুম মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী যে স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রামে ডেইরি আন্দোলন করেছিলেন। ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন চট্টগ্রামের খামারিরা তার সুফল ভোগ করতে পারছে না। গবাদি পশু লালন-পালন ব্যাপকহারে বাড়লেও অসুস্থ পশুর চিকিৎসা করাতে পারছেন না খামারিরা। গবাদিপশুর রোগব্যাধি দেখা দিলে টেলিফোনে চিকিৎসার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। উপজেলা কিংবা থানা প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকদের খামারে নিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ। তাই বেশির ভাগ খামারিকে তার গবাদিপশুর চিকিৎসা টেলিফোনেই করাতে হয়। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার কারণে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ বেশির ভাগ খামারি টেলিফোনে তার গবাদিপশুর রোগের লক্ষণগুলো সঠিকভাবে বলতে পারেন না। তাই সঠিক চিকিৎসাও হয় না। ভুল চিকিৎসার কারণে গরুর মৃত্যুও ঘটে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদ আছে ১৫টি। এরমধ্যে শূন্য আছে চারটি পদ। ভেটেরিনারি সার্জনের পদ আছে ১৫টি। পদ খালি আছে তিনটি। উপজেলা প্রাণি সহকারীর ১৫ পদ থাকলেও লোকবল আছে মাত্র দুইজন। ভেটেরিনারি ফিল্ড এসিস্ট্যান্টের ৪৬টি পদের মধ্যে চারটি খালি আছে, ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডারের ১৫টি পদের মধ্যে শূন্য আছে চারটি, কৃত্রিম প্রজনন ফিল্ড এসিসটেন্টের ১৫টি পদের মধ্যে চারটি পদ শূন্য আছে, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ১৫টি পদের মধ্যে দুইটি শূন্য। ১৫টি ড্রেসারের পদের মধ্যে ৯টিই শূন্য এবং ১৮টি অফিস সহায়কের পদের মধ্যে সাতটি শূন্য পড়ে আছে। জেলায় মোট ১৭২টি কর্মকর্তা-কর্মচারী পদের বিপরীতে লোকবল আছে ১২০ জন। বাকি ৫২টি শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম জেলায় কর্মরত প্রাণিসম্পদ বিভাগীয় জনবলের ১২টি পদের মধ্যে পাঁচটিই শূন্য পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এখানে অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উচ্চমান সহকারী, ল্যাবরেটরি এটেন্ডেন্ট এবং অফিস সহায়ক এবং নিরাপত্তা প্রহরীর পদ শূন্য পড়ে আছে। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে পাঁচটি অনুমোদিত পদ আছে। সবকটি পদেই লোকবল আছে।
অপরদিকে, শহরের তিনটি থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত আছেন তিনজন নারী চিকিৎসক। এছাড়া জেলায় আছেন একজন। অফিস সময়ের বাইরে তাদের কোন খামারে নিয়ে যাওয়া কঠিন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে কোরবানির ঈদে গবাদি পশু জবাইয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছিল তিন লাখ ২০ হাজার। ২০১৬ সালে তিন লাখ ৩৬ হাজার ১১৯টি, ২০১৭ সালে তিন লাখ ৫৬ হাজার ১৬৩টি, ২০১৮ সালে পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি এবং ২০১৯ সালে ছয় লাখ ১০ হাজার ২১৯টি। ২০২০ সালে উৎপাদন হয় ছয় লাখ ৮৯ হাজার ২২টি। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি গবাদি পশু উৎপাদন হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক পূর্বকোণকে বলেন, কোন কোন উপজেলা এবং থানায় একজন মাত্র ভেটেরিনারি সার্জন কিংবা একজন চিকিৎসক আছেন। একদিকে চিকিৎসা দিতে গেলে অপরদিকে মোবাইলেই চিকিৎসা না দিয়ে উপায় নেই। তিনি জানান, একেকটি থানা বা উপজেলায় তিনজন করে ভেটেরিনারি সার্জন হলে তিন শিফটে কাজ করতে পারতেন। এখন তো ২৪ ঘণ্টা একজনকেই সেবা দিতে হচ্ছে। সম্প্রতি একটি অর্গানোগ্রাম অনুমোদন হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন একথা উল্লেখ করে বলেন, তবে সেখানে কি পরিমাণ পদ অনুমোদন হয়েছে তা তার জানা নেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট