চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টিউশনের টাকায় মানবিক কাজ

মরিয়ম জাহান মুন্নী 

১১ নভেম্বর, ২০২০ | ৩:৪৩ অপরাহ্ণ

খুব ভালো লাগে যখন কারো জন্য কিছু করতে পারি। কারো হাতে ছোট্ট একটা খাবারের পেকেট বা উপহার তুলে দিতে পারি। তাদের মুখে যে হাসি দেখি তখন মনটা আনন্দে নেচে উঠে। মনে হয় যেন আরো অনেক কিছু করি। কিন্তু আমার একার কি এমন সাধ্য, তাদের জন্য এতো করবো! যখন রাস্তায় এমন অসহায় মানুষগুলোকে দেখি আমার খুব কষ্ট হয়। সমাজের এ অসহায় মানুষগুলো খুব অল্পতেই খুশি হয়। এর চেয়ে আনন্দ-তৃপ্তি আর কোথাও নেই। তাই আমি আমার সাধ্যের মধ্যে যা পারি তাই করি। কাউকে দেখানোর জন্য নয়।

কথাগুলো বলছিলেন, নওশাদ বিন ইব্রাহিম নামের এক তরুণ লেখক। গতকাল দুপুরেও তেমনি একটি মানবিক কাজে দেখা যায় তাকে। সিআরবিতে খাবারের পেকেট তুলে দিচ্ছেন অনেকগুলো পথশিশু ও নারীর হাতে। সম্প্রতি সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এমবিএ শেষ করেছেন তিনি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি লেখালেখিও তার একটি শখ। প্রায় তাকে দেখা যায় সিআরবি, ডিসি হিল ও রেল স্টেশনের পাশে পথশিশুদের নিয়ে পড়ালেখা করতে ও তাদের খাবার দিতে। এ কাজটি তিনি একাই করেন। তবে সঙ্গী-সাথী হিসেবে মাঝেমধ্যে কিছু বন্ধু-বান্ধবীকেও দেখা যায়। এ যেন এক মানবতার ফেরিওয়ালা। টিউশনের টাকায় অসহায়দের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। তরুণ বয়সে এমন কাজ সত্যি প্রশংসনীয়। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। জন্মস্থান নগরীর আগ্রাবাদ মনসুরাবাদ এলাকায়।

মানবিক কাজে যুক্ত হওয়ার গল্প বলতে গিয়ে নওশাদ বিন ইব্রাহিম বলেন, মাত্র পড়ালেখা শেষ করেছি। এখনো কোনো চাকরি হয়নি। তবে পড়ালেখার পাশাপাশি ছোট থেকেই টিউশন করি। সেই আয়ের টাকা দিয়েই আমি অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। আজও একটি টিউশন থেকে ৬ হাজার টাকা পেয়েছি। সেই টাকা দিয়েই আজ সিআরবির এ পথশিশুদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। করোনাকালীন সময়ে আমি নিজ অর্থায়নে গরিব ও অসহায় মানুষদের মাঝে সাবান ও মাস্ক বিতরণ করি। রমজানে অনেকগুলো রিকশাচালকে ইফতার সামগ্রী দিয়েছি। বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানায় কোরআন শরীফ দিয়েছি কিছু গরীব শিশুদের।

এছাড়া ১শ’টি পরিবারকে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করি। এসব কাজে খরচ করা টাকাগুলো সবই আমার টিউশন থেকে আয় করা। এখানে একটা টাকাও অন্য কারো নেই। আমি একমাত্র টিউশন করি এ অসহায় মানুষগুলোর জন্য। আমার বাবা কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা করেন। তিনিতো মানুষকে দেওয়ার জন্য আমাকে টাকা দিবেন না! তাই আমাকেই বিকল্প হিসেবে এ পথ বেঁচে নিতে হয়েছে। আমাদের যাদের সামর্থ্য আছে তারা প্রতিদিন কত কিছু খাই, নষ্টও করি। তবে আমাদেরই আশপাশে অনেকে আছেন যারা ঠিকমতো দুইবেলা ভাতও খেতে পারছে না। কিন্তু তাদের কথা আমরা কেউ একবারও ভাবি না। এরা না খেতে পেয়ে হাত পাতলে আমরা আবার তাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিই। আবার অনেক সময় বলি কাজ করে খেতে পারো না! কিন্তু আমরা কেউ একবারও ভাবিনা যে বর্তমান সময়ে চাইলেই কাজ পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষগুলোকে হাত পাততে হয়। তাই আমাদের যাদের সাধ্য আছে তাদের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট