চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এলাচিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল!

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৮ নভেম্বর, ২০২০ | ১:৪৬ অপরাহ্ণ

ভারতীয় আমদানি করা নিম্নমানের এলাচিতে কেমিক্যাল মিশিয়ে উন্নতমানের বলে বিক্রি করা হচ্ছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। এছাড়াও অবৈধ পথেও আসছে ভারতীয় এলাচি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত একটি সিন্ডিকেট এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত। একাধিক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা জানায়, বাংলাদেশে বেশি এলাচি আমদানি করা হয় গুয়েতেমালা থেকে। গুয়েতেমালার এলাচি দেশীয় বাজার দখল করে রয়েছে। এছাড়াও ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও এলাচি আমদানি করা হয়।

দেখা যায়, নিম্নমানের এলাচিতে কৃত্রিম রং ও কেমিক্যাল মিশিয়ে প্রাকৃতিক উৎপাদিত এলাচিতে পরিণত করা হচ্ছে। ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টা পানিতে চুবিয়ে রাখার পর সেই কেমিক্যাল ওঠে যাচ্ছে। এলাচি ফোসকা ধরনের বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পানি সবুজ হয়ে যায়। আর গুয়েতেমালা থেকে আমদানি করা এলাচিতে প্রাকৃতিক রং অক্ষুণ্ন রয়েছে। দানাদার ও গুণগতমান একই থাকছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, ‘নিম্নমানের-মানহীন এলাচি বিক্রির বিষয়টি নজরে এসেছে। এজন্য আমদানি বা বাজারে বিক্রির আগে কেমিক্যাল টেস্ট করানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেমিক্যাল টেস্ট করানোর ব্যবস্থা না থাকায় ভোক্তারা এসব ভেজাল-কেমিক্যালমিশ্রিত এলাচি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন’।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি করা এলাচি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে কায়িক পরীক্ষা করা হয়।

সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. আসাদুজ্জামান বুলবুল পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা শুধু পোকা-মাড়কের বিষয়টি পরীক্ষা করি। আমদানি করা পণ্যের গুণগত মান, পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি আছে কিনা এসব দেখি। এছাড়াও আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমোদন আছে কিনা তা দেখি’।

তিনি বলেন, ‘সমুদ্র বন্দর দিয়ে গুয়েতেমালা থেকে বেশি পরিমাণ এলাচি আমদানি করা হয়। ভারত বা অন্য দেশ থেকে আমদানির বিষয়টি আমার জানা নেই। ভারতের স্থল বন্দর দিয়ে নানা উপায়ে আসতে পারে’।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ পথে এলাচি আমদানি করা হয়। কুমিল্লা দিয়ে অবৈধ পথে বেশি আমদানি করা হয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গুয়েতেমালা থেকে এলাচি আমদানিতে সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় প্রতি টনে তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আর ভারত থেকে আমদানি করা এলাচির জন্য ট্যাক্স দিতে হয় দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়াও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথেও বিপুল পরিমাণ এলাচি আমদানি করা হয়।

খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, ভারত ও গুয়েতেমালা থেকে আমদানি করা এলাচি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিকেজি এলাচির দর বর্তমানে ২০৮০ টাকা থেকে ২১শ টাকা। গত বছর এই দিনে চার হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, এলাচির দাম বেশি থাকায় ভারতীয় আমদানি করা এলাচিতে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশিয়ে গুয়েতেমালার এলাচি বলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা।

একাধিক সূত্র জানায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত একটি সিন্ডিকেট ভারত থেকে নিম্নমানের এলাচি আমদানি করে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশিয়ে উন্নতমানের এলাচি হিসেবে বিক্রি করছে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধপথেও এলাচি আমদানি করে আসছে।

একাধিক আমদানিকারক জানান, গত বছর (২০১৯ সাল) সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ভারতীয় এলাচি আমদানি বন্ধ করে দেয়। পরীক্ষায় কেমিক্যালের উপস্থিতি পাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় এলাচি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে ঝুঁকে পড়েছেন চোরাই কারবারি সিন্ডিকেট।

এলাচি আমদানি ও কেমিক্যাল মিশানোর বিষয়ে অন্তত ৭-১০ জন আমদানিকারক-ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি নন।

সূত্র জানায়, পাবনার তিনজনের একটি সিন্ডিকেট বৈধ-অবৈধ পথে নিম্নমানের এলাচি আমদানি করে কৃত্রিম রং বা কেমিক্যাল মিশাচ্ছে। কম দামে আমদানি করা এলাচি কেমিক্যাল মিশিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। পাবনাতেই এই ধরনের কারখানা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকেরা। এতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিন্ডিকেট দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট