চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কবে হবে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান রাউজান উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার!

মিটু বিভাস 

৭ নভেম্বর, ২০২০ | ২:৩২ অপরাহ্ণ

বছরজুড়ে নানা ক্রীড়ানুষ্ঠানে সরব থাকে চট্টগ্রামের অন্যতম রাউজান উপজেলা। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, কাবাডি, দাবাসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট নিয়ে মেতে থাকেন এখানকার ক্রীড়ামোদীরা। শুধু পৌরসভায় নয়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভিন্ন ভিন্ন টুর্নামেন্টে মত্ত থাকে এলাকার মানুষ। গত ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু শতবর্ষে জমজমাট ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর এ.কে.এম ফজলুল কবির স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবলের বর্ণাঢ্য আয়োজন করে থাকে রাউজানবাসী।

করোনাকালে মাঠে খেলা না থাকলেও গত সেপ্টেম্বরে অনূর্ধ্ব-১৬ দাবা প্রতিযোগিতা দিয়ে আবারো খেলায় ফিরেছে। তবে ক্রীড়ার এসব আয়োজনে অনেকটাই যেন আড়ালে থাকে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। বিভিন্ন আয়োজনে ক্রীড়া সংস্থার চেয়ে উপজেলা পরিষদের ভূমিকাটাই যেন বেশি। তবে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ পদাধিকার বলে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবীর সোহাগ। তিনি বলেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বছরে মাত্র এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ পায় রাউজান ক্রীড়া সংস্থা। অথচ এখানে আয়োজিত একটি টুর্নামেন্টের বাজেট ব্যয়ও তার চেয়ে অনেক বেশি। মাননীয় সাংসদ এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী ও স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকদের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে বছরে এত টুর্নামেন্ট আয়োজন সম্ভব হত না।

তিনি বলেন, বতর্মান সাংসদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রাউজানে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে এর মধ্যে আর আর এসি মডেল সরকারি স্কুল মাঠের একপাশে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন গ্যালারি। এছাড়া একটি অত্যাধুনিক জিমনেশিয়াম ও সুইমিং পুল নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনাকালে আপাতত মাঠের খেলা বন্ধ থাকলেও শীঘ্রই আমরা ফুটবল ও ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প দিয়ে ক্রীড়াবিদদের মাঠে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছি। ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হলেও উপজেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও আয়োজনে তিনিই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকসহ ক্রীড়া সংস্থার অন্যান্য প্রতিনিধির ভূমিকাটা এখানে যেন ‘ঢাকের বায়া’র মত।

খেলোয়াড় তৈরি ছাড়াও দক্ষ প্রশিক্ষক, আম্পায়ার, রেফারি তৈরি, উপজেলার ক্লাব বা সংগঠনের মান উন্নয়ন, গ্রামীণ খেলাধূলা টিকিয়ে রাখা এবং এর জন্য বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন ও তার যথাযথ ব্যবহারসহ নানাবিধ কাজ থাকে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার। তবে এসব ব্যাপারে তেমন কোন ধারণা নেই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তাদের।

জানতে চাইলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি রানা সরাসরি কোন জবাব দিতে পারেননি। বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো সংস্থার সভাপতি দেখভাল করেন। বিভিন্ন লিগ বা টুর্নামেন্টে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। অতীতের চেয়ে বর্তমানে খেলা বেড়েছে অনেক। উপজেলায় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন ও পরিচালনার পাশাপাশি সিজেকেএস ফুটবল ও ক্রিকেট লিগে নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকে রাউজান ক্রীড়া সংস্থা। বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুটবল ক্যাম্প ছাড়াও সাঁতারের জন্য আলাদা কোচিং ক্যাম্প শুরুর চেষ্টা করছি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে উপজেলা কমপ্লেক্সে ক্রীড়া সংস্থার জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয় না। ক্রীড়ার সব আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভাপতির অফিস থেকে। উপজেলা পরিষদের ছায়া থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি সংস্থাটি। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে অনাগ্রহই এর অন্যতম কারণ। নতুন এথলেট গড়ে তোলা, উপজেলার উদীয়মান খেলোয়াড়দের সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের জন্য তৈরি করাসহ দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পনা নেই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার। অথচ একসময় চট্টগ্রামের বড় ইভেন্টগুলোতে মাঠ কাঁপিয়েছেন এখানকার ক্রীড়াবিদরা।

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া সংগঠক শিক্ষক মো. ইলিয়াছ জানান, একসময় ফুটবল ও ক্রিকেটে চট্টগ্রামের অন্য উপজেলা থেকে অনেক এগিয়ে ছিল রাউজান। ৯২-৯৩ মৌসুমে উপজেলা ফুটবল লীগে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছিল এখানকার খেলোয়াড়রা। ফাইনালে হাটহাজারী উপজেলার কাছে হারলেও টুর্নামেন্টে সেরা দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল রাউজান। এরপর উপজেলা ক্রিকেট লিগে সন্দ্বীপকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এখানকার ক্রিকেটাররা। সে সময় দর্শকদের যে আগ্রহ ও উত্তেজনা ছিল বর্তমানে তেমনটা দেখা যায় না। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা মাঠের খেলার চেয়ে মোবাইল আর কম্পিউটার গেমে বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। আর সে কারণে সংগঠকরাও ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রাউজান প্রতিনিধি জাহেদুল আলম)

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট