চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অভিনব প্রতারণার ফাঁদ চট্টগ্রামের অলিগলিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ নভেম্বর, ২০২০ | ৬:৪৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর অলিতে গলিতে ফাদঁ পেতে যাত্রী ও পথচারীদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়া প্রতারক চক্রের দৈারাত্ম্য বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। অভিযোগ আছে , রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চালানোর ছদ্মবেশে যাত্রী ও পথচারীদের টাকা, মোবাইল ও গহনা লুট করছে এই প্রতারক চক্র।

নগরীর খুলশী থানা এলাকার এক বাসিন্দা নওশেদ আহমেদ জানান, মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে আমার মা বাজার করতে বাসা থেকে বের হয় । কুসুমবাগের গলিতে ঢুকতেই এক লোক সালাম দেয়। আম্মু ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে সামনে চলে গেল, আরেকজন লোক এসে জিজ্ঞেস করলো আপনি উনাকে চিনেন? আম্মু বললো না। লোকটি বললো উনিতো শাহজালাল মাজারের পীরের ছেলে আপনাকে সালাম দিয়েছে মানে আপনি সহজ সরল ভালো মানুষ। চলেন আপনাকে উনার সাথে পরিচয় করাই দি। এই বলে আম্মুকে কথিত পীরের কাছে নিয়ে গেল সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আরো কয়েকজনকে শরিয়তের জ্ঞান দিচ্ছিল। আম্মুকে বললো ছেলে মেয়েদের নামাজ পড়াবি। হজ করবি এসব বয়ান দিতে লাগলো। এরপর কিভাবে কি করলো আম্মুকে স্বর্ণ টাকা পয়সা যা ছিল সব তাকে দিয়ে দিতে বললো। আম্মুও নিজে থেকে সব দিয়ে কতটুকু সামনে আসতেই হুঁশ ফিরে আসলো। দৌঁড়ে গিয়ে দেখলো সবগুলা গায়েব। ঘটনা ভরা বাজারে ঘটছিল। ওই দিন খুলশী থানায় আমার আম্মু এ বিষয়ে একটা জিডি করেছেন।

এরকম ঘটনার প্রত্যক্ষর্দশী বনি মাহমুদ নামের একজন জানান, গত সোমবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে এক রিকশা চালক তার যাত্রী মা -মেয়ের কাছ থেকে গহনা ও টাকা নিয়ে রিকশা ফেলে বাসে উঠে পালিয়েছে। ঘটনার দশ পনের মিনিট পর তাদের হুঁশ ফিরলে তারা রিকশাটি ধরে কান্না করতে থাকে। পরে ভিকটিমদের এক রিলেটিভ এসে রিকশাটিসহ তাদের বাসায় নিয়ে যায়। বনি মাহমুদ জানান, মা-মেয়ে ফরিদা পাড়া থেকে বহদ্দারহাট মোড় পযর্ন্ত আসতে রিকশাটি ভাড়া করে। বহদ্দাহাট মোড়ে আসলে রিকশাওয়ালা তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে বলে এখানে কি ওষুধ লেখা আছে একটু বলেন বাসায় অসুস্থ লোকের জন্য। তারপর কাগজটা মা ও মেয়ে দুজনেই হাতে নিয়ে পড়েছে । লেখাগুলো ছোট হওয়াতে মুখের কাছেই আনতে তারা হুঁশ হারিয়ে ফেলে। তারপর তারা সব দেখলেও কোন প্রতিবাদ করা বা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজিবুর রহমান খোকন বলেন, এ জাতীয় মেডিসিনগুলো সাধারণত অপারেশনের রোগীদের ব্যবহার করা হয়। এ জাতীয় মেডিসিনগুলো নাকে গেলে ভিকটিমের চিন্তা করার শক্তি বা কথা বলার শক্তি লোপ পায় কিছু সময়ের জন্য। এসময় সে কানে শুনতে পাবে না শুধু দেখে থাকতে পারবে। প্রতারক চক্রের হাতে এমন মেডিসিন চলে যাওয়া ভয়াবহ ব্যাপার।

চমেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জহিরুল হক ভূঁইয়া জানান,গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর)  চমেক থেকে এরকম দুই প্রতারককে আটক করা হয়েছে।  চমেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের স্বর্ণ বিক্রির কথা বলে একধরনের পাথর দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত। কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়ার পর ফাঁদ পেতে মেডিকেলের পূর্ব গেট থেকে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যের পিছু নিই এবং মেইন গেটে উপস্থিত জনসাধারণের সহায়তায় তাদের আটক করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ পুলিশ কমিশনার( উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, প্রতারক চক্রের সন্ধানে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এধরণের ঘটনায় ভিকটিম যদি অভিযোগ করে তাহলে আমি নিজে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।  নিরাপদ থাকতে যাত্রী ও পথচারীদের উচিত অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু না খাওয়া। কারো আচরণ সন্দেহ হলে তারা ৯৯৯ কল করে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া।

পূর্বকোণ/ আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট