চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চবির মেস-কটেজে চুরির হিড়িক

চবি প্রতিনিধি

৪ নভেম্বর, ২০২০ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার পরপরই চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সারোয়ার আলম দীপ ঢাকায় চলে যান। ভাড়া থাকতেন ক্যাম্পাসের পাশে নজরুল কটেজে। করোনায় শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া দিতে যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বেড়েছে চোরের উপদ্রব। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! গতকাল তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে কটেজে এসে দেখি রেখে যাওয়া গিটার, পেনড্রাইভ ও কার্বলিক এসিডের দুটো বোতলসহ অনেক কিছু নেই। এছাড়াও দুটি তবলা, টেবিল ফ্যান ও লাইট ভেঙে রয়েছে। বিছানা চাদর, জিনিসপত্র ল-ভ- হয়ে আছে। এ ঘটনা কটেজ মালিককে জানালে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। যদিও দীপের সন্দেহ কটেজ মালিকের যোগসাজশেই এমনটা হয়েছে।’  দীপ ছাড়াও এমন অভিযোগ করছেন ক্যাম্পাস এলাকায় থাকা আরো অনেকেই। সবার অভিযোগ একটাই কটেজে চুরি হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী চুরির ভয়ে কটেজ ছেড়ে দিচ্ছেন। শুধু কি কটেজ? ছাত্রীদের

মেসেও চলছে চুরির হিড়িক। গত ছয় মাসে প্রায় ৩০টির বেশি মেস-কটেজে চুরির ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, কটেজ বা বাড়ি মালিকদের যোগসাজশেই ঘটেছে এসব চুরির ঘটনা। চুরির বিষয়টি বাড়ির মালিকদের জানালে তারা তো কোনো প্রতিকার করেনই না, উল্টো হুমকি ধমকি দেন শিক্ষার্থীদের। আবার এসব ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা পুলিশকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শিরিণ আক্তার ও সৈয়দা সাদিয়া নামে এ দুই বান্ধবী থাকেন সাউথ ক্যাম্পাসের পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির কামাল উদ্দিন ভবনের চতুর্থ তলায়। তারা জানান, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিরিণ আক্তার বান্দরবান এবং ১ অক্টোবর সাদিয়া রহমান কক্সবাজারে ভ্রমণে যান। ২ অক্টোবর সাদিয়া বাসায় ফিরে দেখেন ভেতরের জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো। পরে দেয়ালে ঝোলানো তার ব্যাগ খুলে দেখেন, সেখানে রাখা ১১ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্বর্ণের আংটি ও নগদ কিছু টাকা নেই।  এ ঘটনা শোনার পর শিরিণ এসে দেখেন তার ট্রলিব্যাগে রাখা একটি স্বর্ণের চেইন, একটি লকেট ও নগদ কিছু টাকা খোয়া গেছে। এ ঘটনায় প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল ভুক্তভোগীরা’।

জানা গেছে, ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ৫ হাজার শিক্ষার্থীর। বাকি ২১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আশেপাশে কটেজ-মেসে থেকে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘প্রশাসন অনেক চাপাচাপি করে ৪০ শতাংশ ছাড় নিয়েছে। এখন দারোয়ান রেখে শিক্ষার্থীদের মালামাল পাহারা দেয়া সম্ভব না। আর শিক্ষার্থীদের উচিত মূল্যবান জিনিসপত্র কটেজে না রাখা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, ‘বেশিরভাগ চুরি ক্যাম্পাসের বাহিরে হচ্ছে। তারপরও চুরির ঘটনা শুনে আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেই। এছাড়া যখনই অভিযোগ পাচ্ছি সেখানে গিয়ে সিসি ক্যামেরা দিয়ে শনাক্ত করার চেষ্টা করতেছি। ইতোমধ্যে দুইজন অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সব ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা তৎপর।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) আবদুল্লাহ আল মাসুম পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যায় আমরা কাজ করে আসছি। যেকোনো ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট