চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তুকি বছরে ৩৫ কোটি টাকা!

ইমরান বিন ছবুর

৪ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। প্রথম দিকে চসিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মানসম্মত থাকলেও, পরবর্তীতে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলো মান ধরে রাখতে পারেনি। চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের আর কোনো সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে না।

চসিকে বর্তমানে ৯০টির মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থী ৬০ হাজারেরও বেশি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয় মেটাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এছাড়া চসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকিয়ে রাখার পাশাপাশি মান উন্নয়নে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে চট্টগ্রামবাসী।

এ ব্যাপারে আলাপে চসিক প্রশাসক বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের নির্বাচিত মেয়র হওয়ার পর শহরে শিক্ষার মান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তী মেয়ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখতে পারেননি। এক্ষেত্রে আইনের মধ্যে থেকে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাহায্য করতে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, নগরীর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে কোনো উচ্চবিদ্যালয় ছিল না। মহিউদ্দিন চৌধুরী সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন। পরবর্তী মেয়রের সময় থেকে মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অযত্ন অবহেলার সম্মুখীন হয়। এছাড়া হঠাৎ সিদ্ধান্তে কিছু উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে রূপান্তর করা হয়। যেটা ছিল সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত।

আগ্রাবাদ হাতেখড়ি স্কুলের কথা উল্লেখ করে চসিক প্রশাসক বলেন, স্কুলটি খুব সুন্দরভাবে চলছিল। কিন্তু ওই স্কুলকে চসিক নিজেদের করে  নিল। এখন ওই স্কুলে প্রতি বছর এক কোটি ৪০ লাখ টাকার মত ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে সিটি কর্পোরেশন নিজেদের করে নিল। বিশাল ক্যাম্পাসের ওই কলেজ সিটি কর্পোরেশনের জন্য বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ সিদ্ধান্তে কাট্টলী স্কুলকে কলেজে উন্নতি করলো। সেখানে ৪০ জনের মত শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক-কর্মচারী মিলে আছেন ২২ জনের মত। ফলে খরচ প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভর্তুকির কথা উল্লেখ করে চসিক প্রশাসক বলেন, প্রতি বছর ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আগামীতে এভাবে ভর্তুকি দেয়ার সামর্থ্য সিটি কর্পোরেশনের নেই। কর্পোরেশনের এখন হাজার কোটি টাকা দেনা। বর্তমানে ফান্ড নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবসরে গেলে তাদের প্রাপ্য টাকা দিতে পারছে না কর্পোরেশন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কিন্ডারগার্টেনগুলো সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সাথে যুক্ত করার ব্যাপারে তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেনগুলো সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সাথে যুক্ত করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা এখন ভাবছি।

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর সিকান্দার খান বলেন, প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। পরিচালনার জন্য কিছু আয়ের পথও ঠিক করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তী মেয়ররা আয়ের পথগুলো পরিচালনা করতে পারেননি। এগুলো যেহেতু বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রীর বাবার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান, তিনি চাইলে এগুলো রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

চসিক পরামর্শক কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বলেন, চট্টগ্রামের শিক্ষাবিদদের নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। কী কী সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করে, সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ

চসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি মান উন্নয়নে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে চট্টগ্রামবাসী।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট