চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মশা-আতঙ্কে নগরবাসী

ইফতেখারুল ইসলাম 

৩ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:৩৭ অপরাহ্ণ

নগরীতে মশার উৎপাত বেড়েছে। বাড়ছে মশাবাহিত রোগের শঙ্কাও। ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হলেও এডিস মশার লার্ভা মিলছে। মশার চরম উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক ব্যাট কিংবা মশানাশক ওষুধ স্প্রে করেও রক্ষা পাচ্ছে না। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে মশক নিধন কার্যক্রম। তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে বৃষ্টির কারণে ওষুধ ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে জোরদার মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হবে। মানুষের বাসাবাড়ি এবং নির্মাণাধীন ভবনসমূহও পরিদর্শনে যাবে চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। বাড়ির ভিতরে মশার বংশ বিস্তারের পরিবেশ পাওয়া গেলে প্রয়োজনে ভবন মালিককে জরিমানা করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, শীতের মৌসুম শুরু হয়ে গেলে ডেঙ্গু আর থাকে না। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর মৌসুম চলে গেলেও অসময়ে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী মশা এবং লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মূলত বৃষ্টির কারণেই ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কিছু রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ব্যাপকহারে নয়। মশক নিধনে গুরুত্ব দেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেয়া হবে।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। বৃষ্টি কমে আসায় নালা-নর্দমায় জমাট হয়ে আছে পানি। সেখানে ডিম ছাড়ছে ফাইলেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের জীবাণুবাহী মশা। বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে মশার ডিম বা লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকায় তা ধ্বংস হয় না। তাই এ সময়টাতে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানোর ওপর জোর দিতে হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, মশার কামড়ে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চর্ম রোগের প্রকোপ অত্যধিক হয়। মশার উৎপাত বাড়ায় মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হালিশহর ছোটপুল সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি কামাল সর্দার পূর্বকোণকে বলেন, রাতদিন ২৪ ঘণ্টা মশার যন্ত্রণায় স্বস্তিতে বাস করতে পারছি না। মশার উৎপাত মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এসব মশা আসছে কোত্থেকে বুঝতে পারছি না।

আগ্রাবাদ রমনা পাড়া এলাকার বাসিন্দা মাসুদ পূর্বকোণকে বলেন, একদিকে ওয়াসার পানি পাচ্ছি না। অপরদিকে মশার উৎপাত বেড়েছে। ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো পড়াশোনাও করতে পারছে না। মশার কয়েল জ্বালিয়ে, স্প্রে দিয়েও মশা প্রতিহত করতে পারছি না। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এই এলাকায় মশার ওষুধ কবে প্রয়োগ করেছে মনে নেই।

বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, সারাদিন দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখি তবুও কিভাবে মশা ঢুকে বুঝতে পারি না। আমরা যারা বিল্ডিংয়ে থাকি তাদের এই দশা, যারা ঝুপড়ি ঘর কিংবা কলোনিতে থাকেন তাদের কী অবস্থা আল্লাহ জানেন।

জানতে চাইলে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন পূর্বকোণকে বলেন, বৃষ্টির কারণে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। কারণ বৃষ্টির মধ্যে মশার ওষুধ ছিটানো হলে তা কাজে আসবে না। বর্তমানে মশার প্রকোপ কিছুটা বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। যে কারণে বিভিন্ন খালের মাঝে বাঁধ দিতে হয়েছে। যে কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে মশা বংশবিস্তার করার সুযোগ পাচ্ছে। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। বিশেষ করে খাল-নালাসমূহে মশার লার্ভা নিধনের ওষুধ ছিটানো হবে। মশাকে নিধন করার চেয়ে বংশবিস্তার রোধ করার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ৩ নভেম্বর (আজ) এ সংক্রান্ত একটি মিটিং ডাকা হয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট