চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

এসআই’র ঘুষিতে তোলপাড়!

নাজিম মুহাম্মদ 

১ নভেম্বর, ২০২০ | ১:১৩ অপরাহ্ণ

সাদা পোশাকে অভিযানে গিয়ে হাতকড়া লাগিয়ে ঘুষি মেরে পরিদর্শকের নাক ফাটালেন উপ-পরিদর্শক (এসআই)। এখানেই শেষ নয়। ঘটনার শিকার নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয় কোতোয়ালি থানায়। বলা হচ্ছে, রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত থাকার অপরাধে তাকে হাতকড়া পরিয়ে মারধর করে থানায় নিয়ে যান কোতোয়ালি থানার সিআরবি ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই রবিউল। পরে তদন্ত করে দেখা যায় ছিনতাইয়ের ঘটনার দিন আফতাব বাসা থেকেই বের হননি। গত ২৫ অক্টোবর বেলা সাড়ে তিনটায় এ ঘটনা ঘটেছে।

আফতাব সিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটে দায়িত্ব  পালন করছেন। জঙ্গি দমন অভিযানে অংশ নেয়া ছাড়া নগরী ও আশপাশে জঙ্গি আস্তানায় পাওয়া বোমা নিস্ক্রিয় করতে ভূমিকা রেখেছেন। ভাল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে আইজিপি পদক দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।  ছিনতাইয়ের মতো ঘটনায় জড়িয়ে এসআইয়ের মারধরে নিজে খুবই অপমানিত বোধ ও পেশাগত সফলতা ম্লান হয়েছে দাবি করে নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পরিদর্শক আফতাব।

জানতে চাইলে নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, আমি এখনো ওই ধরনের কোন অভিযোগ পায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে জেনেছি একজন পরিদর্শকের সাথে সামান্য হাতাহাতি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোন পুলিশ কর্মকর্তা আচরণ যদি অপেশাদার হয়ে থাকে তা তদন্তে প্রমাণিত হলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।  যা ঘটেছে: পুলিশ কমিশনারের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগপত্রে পরিদর্শক আফতাব হোসেন জানান, সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানের আকিকা উপলক্ষে গত ২৫ অক্টোবর বেলা সাড়ে তিনটায় পূর্ব পরিচিত হাসানকে নিয়ে বাচ্চার কাপড় ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য বিকেল সাড়ে চারটায়  রিয়াজউদ্দিন বাজার প্যারামাউন্ট সিটি মার্কেটের সামনে যান। হঠাৎ এক ব্যক্তি সদলবলে এসে আফতাবের ডান হাতে হাতকড়া লাগিয়ে টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। আফতাব নিজের পরিচয় দিয়ে হাতকড়া লাগানোর কারণ জানতে চান। সাথে সাথে ওই ব্যক্তি আফতাবের নাকে ঘুষি মারেন। এসময় নাক ফেটে রক্ত বের হয়ে তার শার্ট ও প্যান্ট ভিজে যায়। পরে জানতে পারেন ঘুষি মারা ব্যক্তি সিআরবি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রবিউল। নিজের পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি সাথে থাকা ওয়াকিটকি দেখিয়ে হাতকড়া পরানোর কারণ জানতে চান। ইতিমধ্যে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শকের  (তদন্ত) সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে রবিউল হাতকড়া খুলে দেন।

আফতাব অভিযোগপত্রে বলেন, রবিউল তাকে ও তার সাথে থাকা হাসানকে একটি সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে তুলে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যান। ট্যাক্সিতে রবিউল বলেন, টাকা ফেরত দিলে সে বাদি পক্ষকে বোঝাতে সক্ষম হবেন। কিন্তু কিসের টাকার কথা বলছেন তার জানা ছিলো না। কোতোয়ালি থানায় পৌঁছার পর আফতাবের  মুঠোফোন নিয়ে নেন রবিউল। পরে ওসির রুমে নিয়ে গেলে দক্ষিণ জোনের উপ কমিশনার ও কোতোয়ালি থানার ওসি রবিউলের মতো তাকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। গত ২২অক্টোবর নুর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কে বা কারা দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে। নুর মোহাম্মদ তার ছেলের কাছে ছিনতাইকারীর শারীরিক গঠনের বর্ণনা করেছেন। বাবার দেয়া বর্ণনামতে ছেলে রাসেল  পুলিশের পরিদর্শক আফতাব ও তার পরিচিত হাসানকে ছিনতাইকারী হিসাবে শনাক্ত করে কোতোয়ালি থানায় পুলিশের কাছে খবর দিলে প্যারামাউন্ট সিটি মার্কেটে থাকা এস আই রবিউল ও এ এসআই অনুপসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে  দ্রুত চলে আসেন।

আফতাব বলেন, ২২ অক্টোবর সারাদিন তিনি বাসা থেকে বের হয়নি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁর বাসার সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখেন এবং এর প্রমাণও পান। ঘটনার দিন হাসান কর্ণফুলী নদীর ওপারে তার বাসায় ছিল সেটিও প্রমাণ পান। পরবর্তীতে ছিনতাইয়ের শিকার নুর মোহাম্মদের ছেলে জানান, ভুলবশত তিনি আফতাবকে শনাক্ত করেন।

আফতাব অভিযোগপত্রে বলেন, একজন জুনিয়র অফিসারের কাছ থেকে এমন ব্যবহার ও মার্কেটের ভেতরে এ ধরনের ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। যা কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। পরবর্তীতে সকল ক্ষেত্রে তার স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হবে। চাকরি জীবনের সকল অর্জন ও সুনাম বিলীন হয়ে গেছে বলে মনে করেন তিনি।

আগে তদন্ত পরে মামলা : স্বাভাবিকভাবে থানায় মামলা দায়ের হবার পর তদন্তে নামে পুলিশ। অনেক সময় মামলা দায়েরের পর মাসের পর মাস পার হলেও তদন্ত আলোর মুখে দেখে না। তবে  নুর মোহাম্মদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের হবার আগেই তদন্তে নামে পুলিশ। গত ২২ অক্টোবর ছিনাতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ২৫ অক্টোবর পরিদর্শক আফতাব ও তার পরিচিত হাসানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়। সাদা পোশাকে এসআই রবিউল আসামি ধরতে অভিযান চালান। অভিযান শেষে  ২৬ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন নুর মোহাম্মদ।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২২ অক্টোবর বেলা সাড়ে চারটায় নিউ মার্কেট মোড় থেকে বাসে উঠে জিইসির মোড় বাসার উদ্দেশ্যে রওনা  দেন নুর মোহাম্মদ। বিকেল পাঁচটায় কদমতলি ফ্লাইওভারের নিচে আট মার্চিং মোড় পেট্রোলপাম্পের বিপরীতে বাস পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি বাসের ভেতর উঠে নিজেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে নুর মোহাম্মদকে নামিয়ে একটি সিলভার রংয়ের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে নেয়। প্রাইভেটকারে চালক ছাড়া অন্য কোন লোক ছিলো না। কারটি টাইগারপাস মোড়ের দিকে রওনা দেয়। ডিবি পরিচয় দেয়া ব্যক্তি কারের ভেতরে নুর মোহাম্মদকে মারধর করে এবং হাতে থাকা ছোরা দিয়ে মারার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। টাকা ছাড়া তার কাছে থাকা একটি নকিয়া-১০৩ মডেলের মোবাইল সেটও ছিনিয়ে নেয়। পরে মুরাদপুর ফ্লাইওভারের শেষ সীমানায় তাকে কার থেকে নামিয়ে দেয়া হয়।

 

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট