চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সাতকানিয়া থেকে অপহৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী উদ্ধার

বাঁশখালী সংবাদদাতা

৩১ অক্টোবর, ২০২০ | ৫:০৩ অপরাহ্ণ

সাতকানিয়া থেকে অপহৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইট বালু পাথর ব্যবসায়ী মো. ঈমাম হোসেনকে (২৭) উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে বাঁশখালী খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদমরসুল গ্রামের সেচ মেশিন ঘর থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি, আড়াই লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার পর  শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) রাতে তাকে কদমরসুল এলাকায় পানি সেচের একটি মেশিন ঘরে আটকে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। 

ক্রয় করা পিকআপটি অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা নিয়ে গেছেন। এই ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সাতকানিয়া কেরানিহাট থেকে পিক আপ (মিনি ট্রাক) নিয়ে মেরামতের জন্য শহরে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয়। 

উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ী জানায়, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আক্কাস মিয়ার ছেলে মো. ঈমাম হোসেন (২৭) পূর্ব পরিচয় সূত্র ধরে গাড়ি ক্রয়ের জন্য সাতকানিয়া উপজেলায় আসেন। কয়েকমাস পূর্বে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাটের গাড়ি ব্যবসায়ী ইউনুচ কোম্পানী থেকে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি পিকআপ (মিনি ট্রাক) ক্রয় করেন। এটির চালক হিসেবে ছিলেন আল আমিন। ক্রয় করা গাড়িটিতে সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট না থাকায় গত বৃহস্পতিবার সাতকানিয়া কেরানিহাটে ইউনুচ কোম্পানীর কাছে আসেন ইট বালু পাথর ব্যবসায়ী মো. ঈমাম হোসেন। ওই সময় সাতকানিয়ার এক প্রতারক চক্র গাড়িটিতে ডকুমেন্ট না থাকায় পুলিশকে খবর দিলে গাড়িটি জব্দ করে পুলিশ হেফাজতে নেয়। পরে ইউনুচ কোম্পানীর মধ্যস্থতায় গাড়ীর কাগজপত্র দেখিয়ে পুলিশ মালিকপক্ষকে গাড়িটি  ফিরিয়ে দেন। এই গাড়ি কেরানিহাট নিয়ে যাওয়ার পর বিকল হয়ে গেলে মেরামতের জন্য চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পথে ৪/৫ জন যুবক পিকআপ (মিনি ট্রাক) সহ মো. ঈমাম হোসেনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। শুক্রবার অস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে মো. ঈমাম হোসেনের বাড়ি থেকে ১০টি বিকাশ একাউন্টে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণের জন্য টাকা প্রদান করেন।

অপহরণের শিকার হওয়া মো. ঈমাম হোসেন পিতা আক্কাস মিয়া বলেন, সাতকানিয়া থেকে ক্রয় করা পিকআপটির কাগজপত্র নিতে সাতকানিয়া কেরানিহাটে আসার পর বৃহস্পতিবার প্রথমে ছেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়েছি। পরে ছেলেকে অপহরণকারীরা অস্ত্র ধরা অবস্থায় মিথ্যা অজুহাতে ব্যবসার কথা বলে টাকার জন্য বার বার ফোন করতে থাকে। দফায় দফায় বিকাশ নম্বরে কমিশনসহ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। বিকাশ নম্বর সংগ্রহে রয়েছে।

উদ্ধার হওয়া মো. ঈমাম হোসেন বাঁশখালী থানায় আসার পর বলেন, ‘পিকআপের কাগজপত্র নিতে এসে একটি প্রতারক চক্র প্রথমে গাড়িটি থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন। ওই জায়গা থেকে ফিরে আসার পর অপহরণের শিকার হই। অপহরণকারী চক্রটি সিএনজি টেক্সিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে খানখানাবাদের সাগর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করে ভয় ভীতি দেখায়। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) সকালে কদমরসুল এলাকায় পানি ভেঙ্গে চাষের জমির উপর দিয়ে একটি বাজারে গিয়ে দেখি একসাথে ৪টি গরু জবাই করা হচ্ছে। অপহরণকারী চক্রটি গরু জবাইয়ের দৃশ্য দেখায় আমাকে। এই দৃশ্য দেখে আমি ভয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ি। অপহরণকারী যুবকরা বুকে পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে মোবাইলের বিকাশ নম্বরে মুক্তিপণের জন্য টাকা দাবি করতেই থাকে। বাধ্য হয়ে বাবা মা ভাই ও আত্মীয়স্বজনকে বিষয়টি অবহিত করি। মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারী (৬/৭জন) যুবক কদমরসুল এলাকায় পানি সেচের একটি মেশিন ঘরে আটকে রেখে পালিয়ে যায়।

মো. ঈমাম হোসেনের ছোট ভাই মো. ইদম হোসেন বলেন, ‘ইট বালু পাথর ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষে বড় ভাই সাতকানিয়ার কেরানিহাটের ইউনুচ কোম্পানী থেকে গাড়িটি ক্রয় করেন। এই গাড়িটি আমাদের পরিবারের জন্য কাল হয়ে গেল।’

খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বদরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদম রসুল গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইসমাইল ও জিয়াউর রহমান ও লোকজনের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ইট পাথর ও বালু ব্যবসায়ী অপহরণের বিষয়টি অবহিত হই। শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে বাহারছড়া ফাঁড়ির পুলিশকে খবর দিলে তারা উদ্ধার করে বাঁশখালী থানায় নিয়ে যায়। কারা জড়িত পুলিশ তদন্ত করে দেখছেন।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, পুলিশের সহায়তায় ভিকটিম মো. ঈমাম হোসেন উদ্ধার হয়েছে। পিকআপটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। জড়িত চক্রের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে গ্রেপ্তার অভিযান ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি চলছে। 

পূর্বকোণ/পিআর

  

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট