চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অলংকারে সড়ক টার্মিনাল, নেপথ্যে চাঁদাবাজি

এক কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে বাস-ট্রাকের সারি

অলংকারে সড়ক টার্মিনাল, নেপথ্যে চাঁদাবাজি

নারী শ্রমিকেরা প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ অক্টোবর, ২০২০ | ৫:০২ অপরাহ্ণ

অলংকার মোড় থেকে পশ্চিমমুখী আলিফ গলি সড়ক ধরে হাঁটতে গেলে নতুন কারও মনে হতে পারে-কোনো বাস টার্মিনালে ঢুকে পড়লেন না তো! কারণ, প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের দু পাশেই শতাধিক বাসের সারি। এই সড়ক গিয়ে যেখানে মিশেছে সেই সড়কটি অবশ্য বাসের দখলে নেই। বিটাক মোড় থেকে বিসিক শিল্প নগরী পর্যন্ত বিস্তৃত ওই সড়কটির দু’পাশ দখল নিয়েছে ট্রাক আর লরি। গত মঙ্গলবার দুপুরে দেখা এই দৃশ্য প্রতিদিনের।

সড়কের ওপর বাস, ট্রাক ও লরি রাখায় দুই তৃতীয়াংশ জায়গা সারাক্ষণই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়ক সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় একদিকে গাড়ি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে, অন্যদিকে মানুষকে হাঁটাচলায়ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এটার কারণে বিসিক তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। এই অপ্রীতিকর পরিবেশের কারণে বিদেশি ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। অবশ্য কারা চাঁদা নিয়ে এসব ট্রাক ও বাস বসানোর সুযোগ করে দিয়েছেন তাঁদের নাম এলাকার সবার মুখে মুখে। বাস ও ট্রাকের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেও এলাকাবাসীর সেই দাবির সত্যতাও পাওয়া গেছে।

জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুক যুবলীগ নামধারী এক নেতা এবং তাঁর অনুসারীরা তো আছেনই, পাশাপাশি শ্রমিক লীগের নামেও প্রতি বাস ও ট্রাক থেকে দিনে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে চাঁদার পুরোটা এদের পকেটে ঢুকে না। ২০০ টাকার মধ্যে ১০০ টাকা চলে যায় পুলিশের হাতে। ‘ক্যাশিয়ার মাসুদ’ নামের এক ব্যক্তি সংগ্রহ করে পুলিশের সেই ভাগটা পৌঁছে দেন। কিন্তু বিপদে পড়বেন-এই আশঙ্কায় কেউ নাম প্রকাশ করে মুখ খুলতে রাজি হননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সড়কের বিটাক মোড় থেকে বিসিক শিল্প নগরীর দিকে যাওয়া সড়কটি ছয় লেনের। মোড়ের মুখে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্স থাকলেও সেটি ছিল তালা দেওয়া। সড়কের ওপর কয়েক সারি করে ট্রাক-লরি রাখায় বিসিক শিল্প নগরীর বিভিন্ন কারখানায় আসা-যাওয়া করা গাড়িগুলো একটু পর পর যানজটে আটকে যাচ্ছিল। কোথাও কোথাও ট্রাক-লরিগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছিল। এতে সড়কে কাদা-পানি একাকার করছিল। ফুটপাত দিয়েও হাঁটার সুযোগ নেই। কারণ সেখানে পরিবহন শ্রমিকদের খাবারের জোগান দিতে বসেছে নানা দোকান।

বিসিক শিল্প নগরীতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০০টি প্লট রয়েছে। এসব কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী। প্রতিদিন সকাল-বিকেল আসা যাওয়ার সময় এই শ্রমিকদের বাস ও ট্রাক শ্রমিকদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয়।

সেটিই বলছিলেন বিসিক শিল্প নগরীর দুটি কারখানার দুজন মালিক। নাম প্রকাশ না করে তাঁরা পূর্বকোণকে বলেন, ‘সড়ক বাস ও ট্রাক দখল করে রাখায় শিল্প নগরীর কোনো পরিবেশই নেই এখন। কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার সময় নারী শ্রমিকেরা প্রতিদিনই ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন। আর এই পরিবেশ দেখে বিদেশি ক্রেতারাও বিরক্ত। তাঁরা আমাদের সাফ বলে দিয়েছেন, ‘‘তোমাদের এখানে আসা যাবে না আর। কারণ, শিল্প নগরীর পরিবেশই নেই এখানে। আগে এসব ঠিক করো।’’ কিন্তু আমরা তো নিরূপায়।’

নিরূপায় হওয়ার কারণ খোলাসা করলেন এই দুই ব্যবসায়ী। বলেন, ‘সরাসরি বললে তো ঝামেলায় পড়ে যাব। কারণ, যুবলীগ নামধারী এক নেতা চাঁদার বিনিময়ে বাস ও ট্রাক বসার সুযোগ করে দিয়েছেন। এসব বিষয়ে কয়েকবার ট্রাফিক পুলিশকে অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পরে জানতে পারি তাঁরাও চাঁদার ভাগ পান। তাই সড়ক থেকে বাস-ট্রাক সরাতে তাঁরা আগ্রহী নন।’

তবে সড়কের ওপর বাস-ট্রাক বসানো ও চাঁদার ভাগ পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (পশ্চিম) উপকমিশনার জয়নুল আবেদীন টিটু। মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট