চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সোনালি ধানে মুগ্ধ কৃষক

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৭ অক্টোবর, ২০২০ | ২:২০ অপরাহ্ণ

পাকা ধানে দোল খাচ্ছে আমন ক্ষেত। দিগন্তজোড়া মাঠে হলুদ-সবুজের ছড়াছড়ি। সোনালি ধানে মাতোয়ারা কৃষক। প্রকৃতি সহায় থাকায় ভালো ফলন হয়েছে আমনের। সীমিত আকারে শুরু হয়েছে ধান কাটা। আগামী সপ্তাহ থেকে হচ্ছে উৎসবের আমেজ।

কৃষি বিভাগ জানায়, অগ্রহায়ণ মাস থেকে আমন কাটা শুরু হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে রোপণ ও কাটা হয় দেরিতে। সেই হিসাবে কার্তিক মাসের শুরুতে সীমিত আকারে ধান কাটা শুরু হয়। কৃষকরা জানান, নতুন ধান ঘরে তোলার আগে সনাতন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সাতটি কুলায় ফুল সাজিয়ে তিথি অনুযায়ী নদী-খালে জোয়ারে ভাসানোর পর গোলায় নতুন ধান তোলা হয়। মুসলিম ধর্মীয় রীতিতেও ধর্মীয় আচারের পর গোলায় ধান তোলা হত। তবে যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে সেই রীতিতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখনো সেই রীতি মেনে গোলায় ধান ভরেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কৃষক। নতুন জাতের ধান আবাদ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমন আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের দাবি, চট্টগ্রামের প্রতি বছর কমছে ফসলি জমি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর (২০১৯-২০) আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমি। গত বছরের সমান। ২০১৬ সালে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ২০৯ হেক্টর। অর্জিত হয়েছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ হেক্টর। পাঁচ বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্র বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৩ হেক্টর।

কৃষি বিভাগ জানায়, বোরো ও আউশের চেয়ে আমন চাষে খরচ অনেকটা কম। তবে ঝুঁকি থাকে বন্যা আর জলোচ্ছ্বাসের। সেই ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমন আবাদ বাড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন কৃষক।

বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী এলাকার কৃষক আবদুল নবী বলেন, জলোচ্ছ্বাসের কারণে নষ্ট বীজতলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই দেরিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। এবার আড়াই একর জমিতে চাষাবাদ করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামে বড় ক্ষতি হয়নি। কারণ এ অঞ্চলের বীজতলা তৈরি ও আমন রোপণ একটু দেরিতে হয়।

আমন হচ্ছে এই অঞ্চলের বড় চাষাবাদ। বোরো ও আউশের তুলনামূলক খরচ কম বিধায় আমনের চাষাবাদ বেশি হয়। এছাড়াও এ সময়ে সবজি চাষাবাদ অনেকটা কম হয়। তাই কৃষকেরা পুরোপুরি ধান চাষে ব্যস্ত থাকেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫-৬ বছর থেকে আমনে খরা, বন্যার বড় প্রভাব, পোকা-মাড়কের আক্রমণ না থাকা এবং বিদ্যুৎ বড় ধরনের বিপর্যয়ে সেচে বিঘ্ন না ঘটায় আমনের চাষাবাদ বেড়েই চলেছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ফটিকছড়িতে ২২ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে আমান লাগানো হয়েছে। সন্দ্বীপে ২৪ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমি। মিরসরাই উপজেলায় ২১ হাজার ১১০ হেক্টর জমি। আনোয়ারায় ৬ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে। বাঁশখালীতে ১৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টর। বোয়ালখালীতে ৪ হাজার ৫শ হেক্টর। চন্দনাইশে ৮ হাজার ১৮০ হেক্টর। হাটহাজারীতে ৯ হাজার ১৬০ হেক্টর। লোহাগাড়ায় ১১ হাজার ৫০ হেক্টর। পটিয়ায় ১২ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমি। রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে। রাউজানে ১১ হাজার ২৭৬ হেক্টর। সাতকানিয়ায় ১২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমি। সীতাকুণ্ডে ৫ হাজার ৮শ হেক্টর। নগরীর ডবলমুরিং থানায় ৪৯০ হেক্টর। পাঁচলাইশে এক হাজার ১২০ হেক্টর।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট