চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ট্রাফিক সিগন্যালে ঘুরেফিরে ‘হাতের ইশারা’

আল-আমিন সিকদার

২৭ অক্টোবর, ২০২০ | ১:১৭ অপরাহ্ণ

রাখালের কাজ আমাদের সবারই জানা। হাতে লাঠি নিয়ে একপাল গরুর নিয়ন্ত্রণ রাখাই তার কাজ। রাখালের হাতের লাঠি যে দিকে নির্দেশনা দেয় গরুর পালটি সেই নির্দেশ মেনেই চলে। যদিও পালের দু’একটি গরু এই নির্দেশ অমান্য করে, তখনই রাখালের লাঠির কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যায়। আর এ পুরো কার্যক্রমটিই যেন মিলে যায় ডিজিটাল যুগের ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমের সাথে। যুগ যুগ ধরে হাতের লাঠির ইশারায় সড়কের গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ট্রাফিক সদস্যরা। যদিও বেশ কয়েক বার আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছিল পুলিশের এ বিভাগটিতে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাণ্যিজিক নগরীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বসানো হয়েছিল সিগন্যাল লাইট। সমন্বয়হীনতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এ প্রকল্পটি।

২০১০ সালে চসিকের ৩ কোটি টাকার এ অর্থায়ন যখন বিলুপ্ত হতে বসেছিল তখনই আশার আলো নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। চসিকের সহযোগিতায় নগরীর পাঁচটি মোড়ে গত বছরের ২২ নভেম্বর থেকে সিগন্যাল লাইটের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছিল ট্রাফিক বিভাগ। পর্যায়ক্রমে নগরীর প্রতিটি মোড়ে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় এ সিগন্যাল বাতি বসবে এবং প্রতিটি মোড় থেকে পুলিশই এর নিয়ন্ত্রণ করবে বলে ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতার বরাত দিয়ে ট্রাফিকের এ সিগন্যাল লাইট প্রকল্প নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন সড়ক সংশ্লিষ্টরা।

বলেছিলেন, বাস্তবায়নে ট্রাফিক বিভাগের চ্যালেঞ্জিং ও বাধার কথা। চালকদের খেয়ালিতে এবারের সিদ্ধান্তও আলোর মুখ দেখবে না মন্তব্য করেছিলেন তারা।
সড়ক সংশ্লিষ্টদের করা নেতিবাচক মন্তব্যই যেন সঠিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর ট্রাফিক সিগন্যাল লাইটগুলো জীবিত হওয়ার তিন মাসের মাথায় যেন প্রাণ হারাতে বসেছে। তাইতো যে পাঁচটি মোড় দিয়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে সড়কে সিগন্যাল লাইট কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছিল তা সবই এখন অতীত।
নগর ট্রাফিক বিভাগের তথ্য মতে, যানজট নিরসনে ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চসিকের সহযোগিতায় ইস্পাহানি, টাইগারপাস, চৌমুহনী, বাদামতলী ও বারিক বিল্ডিং মোড়ে বসানো হয়েছিল সিগন্যাল বাতি। তবে চসিক নয়, এবার এই সিগন্যাল লাইটগুলোর নিয়ন্ত্রণ করেছিল পুলিশ। পর্যায়ক্রমে নগরীর প্রতিটি মোড়ে বসানোর কথা ছিল এ ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট। বাকি মোড়গুলোতে সিগন্যাল কন্ট্রোল বসাতো দূরে থাক, এ কার্যক্রম শুরুর মাত্র তিন মাসের মাথায় অতীতের প্রকল্পের মতই অযতœ আর অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে নগরীর পাঁচ মোড়ে শুরু হওয়া সিগন্যাল লাইটগুলো। সরেজমিন পরিদর্শনের এ চিত্র বলছে, এ যেন যেই লাউ, সেই কদু। তাইতো, ঘুরে ফিরে সেই মান্ধাতা আমলের লাঠির ভরসাই করছে ট্রাফিক সদস্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিকের মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা পূর্বকোণকে বলেন, সঠিকভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বার বার বন্ধ হয়ে যায় এ উদ্যোগ। যেমন, মাত্র কয়েক মাসেই নষ্ট হয়ে গেছে লাইটগুলো। কে ঠিক করবে, কবে ঠিক করবে তারও কোন হদিস নেই। যার কারণে, দিন দিন পরিশ্রম বাড়ছে আমাদের। এদিকে খুব শীঘ্রই চট্টগ্রামের সড়কে সিগন্যাল লাইট জ্বলছে না বলে পূর্বকোণকে জানান ট্রাফিকের দক্ষিণ বিভাগের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘করোনার পর সবকিছুই এখনো অস্বাভাবিক। দীর্ঘদিন করোনার কারণে বন্ধ থাকায় এখন কোনো কোনো স্থানে হয়ত সিগন্যাল বাতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া এ সিগন্যাল লাইট নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প হওয়ার পরিকল্পনা চলছে। যেটা শুরু হতেও বেশকিছু দিন সময় লাগবে। সুতরাং, খুব শীঘ্রই এ সিগন্যাল লাইট আর জ্বলবে বলে মনে হচ্ছে না। কিছুটা সময় লাগবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট