চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

দেবীর বিদায়ে পূজার্থীর ঢল

মিটু বিভাস

২৭ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। বোধনে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আগমন ঘটেছিল দুর্গার। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হল তার। পাঁচ দিনের উৎসব শেষে দুর্গা ফিরলেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে।’ দেবী দুর্গা পৃথিবীতে এসেছিলেন ভক্তদের কষ্ট দূর করতে। বিজয়া দশমীর দিন আবারও মর্ত্যলোক ছেড়ে গজে চেপে স্বর্গলোকে প্রস্থান করলেন দেবী। শাস্ত্র মতে ‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা’। অর্থাৎ গজে বা হাতিতে প্রস্থান করলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয়। সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হয় মর্ত্যভূমি। করোনাকাল কাটিয়ে আবারো সুন্দর পৃথিবী ফিরে আসবে এমন প্রত্যাশা নিয়ে শেষ হয়েছে এবারের দুর্গাপূজা।

মহামারীর দিনে দেবীর বিজয়া শোভাযাত্রার সেই সমারোহ এবার ছিল না। ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবীর দেবালয়ে ফেরার দিনে ঢাক আর কাঁসের বাদ্য সাথে শঙ্খের ধ্বনিতে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় দুর্গা মাকে বিদায় জানান মর্ত্যের বাসিন্দারা। প্রতিমা বিসর্জনের আগে বিবাহিত মহিলারা মা দুর্গার পায়ে সিঁদুর ঠেকান এবং পরিবারের শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্যে প্রার্থনা করেন। দেবীর বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য করোনাকালেও দশমীতে ভক্তরা সীমিত পরিসরে মেতে উঠেছিলেন সিঁদুর খেলায়। প্রতিমা ঘাটে নেয়ার পর ভক্তরা শেষবারের মতো ঢাকের তালে ধূনচি নৃত্যে বিদায় জানান মা দুর্গাকে। এবারও নগরীর সর্বাধিক প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। এছাড়া কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীতে এবং অনেক মণ্ডপে স্থানীয়ভাবে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে।

পতেঙ্গায় সকাল সাড়ে এগারটা থেকে প্রতিমা নিয়ে ভক্তরা আসতে শুরু করে। দুপুরের পর থেকে পূজার্থীর ঢল নামে সৈকতে। তবে নিরাপত্তা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সারিবদ্ধভাবে নিয়ম মেনে প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছেন ভক্তরা। এখানে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ১১০টি প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এ উপলক্ষে মহানগর পূজা পরিষদের উদ্যোগে সৈকতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন নগরবাসীকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা মেনে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এবার সাত্ত্বিকভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছে। আমি নবমীর রাতে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শন করেছি, কোথাও গান-বাজনা বা অত্যাধিক কোন আয়োজন দেখিনি। কোভিড পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়ম মেনে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছেন সবাই। এজন্য সরকারও তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

বিসর্জন শেষে মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি এডভোকেট চন্দন তালুকদার পূর্বকোণ বলেন, করোনা মহামারীতে এবার নিয়ম মেনে পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়। বিসর্জনে এবার ছিল না কোন শোভাযাত্রা। ফলে পূজার্থীদের ভিড় ছিল কিছুটা কম। শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ায় তিনি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল দু’একটি উপজেলা ব্যতীত চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। সীতাকুণ্ড উপজেলায় সর্বশেষ রাত ৮টায় প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় পূজা পরিষদের বিভাগীয় যুগ্ন সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত বলেন, প্রশাসনে সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এজন্য সরকার, প্রশাসনসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট