চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কারাবন্দীদের খাবার: ‘মান্ধাতা’ আমলের নিয়মেই হিসাব

কারাবন্দীদের খাবার: ‘মান্ধাতা’ আমলের নিয়মেই হিসাব

নাজিম মুহাম্মদ

২৬ অক্টোবর, ২০২০ | ৫:২১ অপরাহ্ণ

দেড়শো বছরের পুরনো নিয়মেই চলছে কারাবন্দীদের খাবার হিসাব। একজন বন্দীর জন্য সরকারিভাবে যে পরিমাণ আমিষ ও ভিটামিন জাতীয় খাবার বরাদ্দ করা হয়, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি কম পাচ্ছে বন্দীরা। এতে বন্দীদের শরীরে বাসা বাধছে নানা রোগ ব্যাধি, কমছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ১৮৬৪ সাল থেকে বন্দীদের দেয়া হয়েছে একই পরিমাণ খাবার।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৮০০ বন্দীর ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চট্টগ্রাম কারাগারে গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার বন্দী বসবাস করছে। তাদের সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়। খাবারের তালিকায় একজন বন্দীর জন্য ৩৬ দশমিক ৪৫ গ্রাম মাছ, ৩৮ দশমিক ৭৮ গ্রাম (হাড়সহ) গরু বা মহিষের মাংস, মুরগির ক্ষেত্রে ৩৭ দশমিক ৯০ গ্রাম (হাড়সহ) মাংস, সবজির ক্ষেত্রে ২৯১ দশমিক ৬০ গ্রাম বরাদ্দ রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে বরাদ্দকৃত এসব খাবারও জুটছে না বন্দীদের ভাগ্যে। যেমন, ৩৬ দশমিক ৪৫ গ্রাম হিসাবে এক কেজি ওজনের একটি মাছ ২৭ জন বন্দীর মাঝে বন্টন করতে হয়। এর মধ্যে একটি মাছের মাথার ওজন প্রায় ২০০ গ্রাম চলে যায়। একটি মাছের মাথা দুইভাগের বেশি করা যায় না। অর্থাৎ একটি মাথা দুইজনকে দেয়া যায়। মাছের আঁশ, লেজ, মাথা ও নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করার পর মাছটির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম কমে যায়। বাকি ৬৫০ গ্রাম মাছ ২৫ জনের মধ্যে ভাগ করে দিতে হয়। এতে জনপ্রতি বরাদ্দ ৩৬ দশমিক ৪৫ গ্রামের পরিবর্তে ২৬ গ্রাম হয়ে যায়। কাঁচা মাছ ধোঁয়া ও রান্না করার পর কমে যায় আরো ২/৩ গ্রাম। সবকিছুর পর একজন বন্দী তার খাবারের সাথে ১৮/১৯ গ্রাম মাছ পায়। মাংসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। একজন বন্দীর জন্য ৩৮ দশমিক ৭৮ গ্রাম ( হাড়সহ) গরুর মাংস বরাদ্দ রয়েছে। পরিষ্কার করে রান্না করার পর ১০ থেকে ১২ গ্রাম কমে গিয়ে ২৮ গ্রাম হয়ে যায়। একইভাবে একজনের জন্য বরাদ্দকৃত ৩৭ দশমিক ৯০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগির মাংস (হাড়সহ) রান্না করার পর ১০ গ্রাম কমে গিয়ে ২৭ গ্রাম হয়ে যায়। সবজির ক্ষেত্রে একই অবস্থা। একজনের জন্য দৈনিক ২৯১ দশমিক ৬০ গ্রাম সবজি বরাদ্দ রয়েছে। রান্নার জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের পর উচ্ছিষ্টঅংশ ফেলে দিলে ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম কমে যায়। রান্নার পর আরো কমে গিয়ে ১৫০ গ্রামে পরিণত হয়। প্রতি বেলায় একজন বন্দী ৭৫ গ্রামের বেশি সবজি পায় না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি জানান, প্রত্যেক মানুষের শরীরের ওজন কিংবা বয়স একই রকম নয়। তবে গড় অনুপাতে একজন মানুষের শরীরের জন্য প্রতিবেলা খাবারে ৬০ থেকে ৬৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। কারাবন্দীদের ক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কারাগারে বন্দীদের পরিশ্রম নেই বললেই চলে। তার উপর বন্দীরা নানা ধরনের মানসিক অশান্তিতে ভুগে। প্রোটিন কিংবা ভিটামিনের অভাব হলে তাদের শরীরে নানা রোগ বাসা বাধবে, কমবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। মাংস, মাছ,ডিম, দুধ ইত্যাদি থেকে মানবদেহ প্রোটিন পায়। প্রোটিন ছাড়া কোন প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই প্রোটিনকে সকল প্রাণের প্রধান উপাদান হিসাবে গণ্য করা হয়। মানব দেহের মূল কার্যক্রম চালনার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ত্বক,চুল, আঙ্গুল, হাড়, রক্ত ইত্যাদির জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত দেহের নানা অংশকে একত্রে ধরে রাখে প্রোটিন। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয়।

কারাগারের চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজন এ কে এম ফজলুর রহমান জানান, বিষয়টি কারাকর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। নতুন জেল কোডে বন্দীদের সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দেড়শো বছর ধরে তাদের সকালের নাস্তায় রুটি ও গুড় দেয়া হতো। গত বছর থেকে সপ্তাহে দুই দিন খিচুড়ি, চারদিন সবজি, রুটি ও একদিন হালুয়া রুটি দেয়া হচ্ছে। জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসে, পহেলা বৈশাখে খাবারের বরাদ্দ ছিল ৩০ টাকা। সেটি এখন ১৫০ টাকা করা হয়েছে। মুসলিম বন্দীদের ইফতারির বরাদ্দ ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট