চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শুধু ক্রয়ে নয় বিক্রয়েও এখন নারীরা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৪ অক্টোবর, ২০২০ | ৩:১০ অপরাহ্ণ

‘আপা ভেতরে আসেন, কি লাগবে দেখেন, ভালো লাগলে কিনবেন’ এভাবেই ডাকাডাকি করছে নগরীর চকবাজার কেয়ারি ইলিশিয়াম শপিংমলের নারীকর্মীরা। দৃশ্যটি শুধু নগরীর একটি শপিংমলের নয়, বর্তমানে নগরীর প্রায় সবগুলো শপিংমলেই নারী দোকানিদের দেখা যায়। সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছে যুগের। পরিবর্তন হয়েছে মানুষের মন-মানসিকতারও। তাই নারীরা এখন ঘরের বাইরেও কাজ করছে। শুধু ক্রয় নয় বিক্রয়ও এখন নারীরাই করছে। নগরীর নামিদামি শপিংমলসহ ছোট-বড় প্রায় দোকনেই এখন কাজ করে নারীকর্মীরা। নানান রকম প্রসাধনী নিয়ে দোকান সাজিয়ে মলগুলোতে বসেছে এ নারী বিক্রেতা।

বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা কমিউনিটির একটি তথ্যে দেখা যায়, দশ বছর আগেও নারীদের এমন কর্মক্ষেত্রের সুযোগ ছিল না। কিন্তু এখন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ নারী বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সাথে জড়িত।

কিন্তু সময়ের পরিবর্তন হলেও নারীরা কি তাদের কর্মক্ষেত্রে কাজের শোভন পরিবেশ এখনো পাচ্ছেন? এ বিষয় নিয়ে নগরীর কিছু নারী নেত্রী বলেন, সমাজ পুরুষকে যেভাবে সুযোগ দিয়েছে নারীকে এখনো সেভাবে দেয়নি। নারীদের জন্য এখনও পুরোপুরি উদারতা তৈরি হয়নি। তবে এতকিছুর পরও অনেকটা এগিয়েছে সমাজ। এভাবে চললে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হতে বেশি সময় লাগবে না। কেয়ারি শপিংমলের নারী উদ্যোক্তা কুলসুমা বলেন, ‘একসময় আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করত। পরে ধীরে ধীরে সংসার বড় হয়। একটা সময় তার একার আয়ে সংসার চলে না। তাই নিজেই কিছু করার কথা ভাবি। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে এ মার্কেটে একটা দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। করোনার পরে আমার স্বামীর চাকরিও নেই। নিজে ব্যবসা করছি ঠিকই। কিন্তু আমরা নারীরা সমাজে বড় অসহায়। কারণ আমরা খুব নিচে থেকে উঠে আসি। আমাদেরও উঠে আসতে সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ সহযোগিতাগুলো আমরা পাই না কোনো ঋনদানকারী এনজিও বা ব্যাংক থেকে। এজন্য আমরা ব্যবসার প্রসার করতে পারি না। আমরা নারী বলে ব্যাংক ও এনজিওগুলো আমাদের সহজে ঋণ দিতে চায় না। আমরা নারী উদ্যোক্তারা এ সমস্যায় সবসময়ই ভুগি। এছাড়া মেয়ে হিসেবে আরো অনেক সমস্যাতো আছেই’।

এ বিষয়ে মানবাধিকার ও সমাজকর্মী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, শুধু ব্যবসার জগতে নয়, বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা সফল হচ্ছে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের ভূমিকা রয়েছে। একটা সময় ছিল যখন পুরুষ আয় করতো আর নারীরা ঘরে থাকত। কিন্তু এখন নারীরা সবক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নারীর এ অগ্রগতিতে এখনো অনেক বাধা রয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছে বলা ঠিক হবে না। হলে কি আর প্রতিদিন ধর্ষণ, নারী নির্যাতন হত? আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে সমাজের অর্ধেক অংশ নারী। যাদের উন্নতি হলে সমাজও উন্নত হবে। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়া উচিৎ। এখন বিভিন্ন শপিংমলে নারী উদ্যোক্তাদের দেখা যায়। এটি খুবই ভালো দিক। এভাবেই একদিন দেশের অর্থনীতির চাকা সবল হবে। তবে মার্কেটগুলোতে মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ এবিষয় এখনো আমরা জানিনা। বিশেষ করে প্রতিটি মলে একটি করে সংগঠর রয়েছে। এই সংগঠনগুলোকে নারী উদ্যোক্তা ও নারী কর্মীদের বিষয়ে সুদৃষ্টি রাখা দরকার। সব পুরুষ জাতিকে মনে রাখতে হবে আমাদের সবার ঘরেই মা-বোন রয়েছে। তাদের আমরা যেভাবে সম্মান করি সেভাবে আমরা কর্মক্ষেত্রেও নারীদের সম্মান করব। একজন নারীকে সফলতা পেতে হলে প্রথমে দরকার পারিবরিক সমর্থন। পরিবার থেকে সাপোর্ট না পেলে কোনো নারী এগিয়ে যেতে পারে না। এরপর সরকারের সহযোগিতা তো প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগবে। যেমন- ব্যবসা করতে হলে ব্যাংকে নারীদের স্বল্প সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করা দরকার। যদিও ব্যাংক-এনজিওগুলোতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা কথা বলে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় না নারীরা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট