চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

নব উদ্যমে চালুর স্বপ্ন আমিন জুট মিল

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৩ অক্টোবর, ২০২০ | ২:০০ অপরাহ্ণ

সরকারের ঘোষণায় দেশের পাটকলগুলোর মতো বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের আমিন জুট মিল। মিল বন্ধ থাকায় অনেকটা অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিকেরা। তারপরও আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা। আবারো নতুন উদ্যমে চালু হবে দেশের প্রাচীনতম এই পাটকল। তবে পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

আমিন জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক এ এইচ এম কামরুল হাসান গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্বকোণকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে দেয়ার আলাপ-আলোচনা হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ পাকিস্তান আমলের এ মিলের বেশিরভাগ মেশিনই পুরোনো। তালি জোড়া দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

একাধিক শ্রমিক বলেন, মিল বন্ধ থাকায় অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে। তারপরও আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন তারা। বেসরকারি খাতে নতুন উদ্যোগে ফের চালু হওয়ার প্রতীক্ষায় রয়েছেন। অন্যথায় দক্ষ শ্রমিক হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সোনালি ঐতিহ্য পাটশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমিন জুট মিলে স্বাধীনতার পরও কাজ করতেন ৩০-৩৫ হাজার শ্রমিক। রাত-দিন পালাক্রমে শ্রম বিকাতেন তারা। কালের পরিক্রমায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাচীন এই শিল্প প্রতিষ্ঠান টানাপোড়েন আর অর্থ সংকটে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ৯০ এর দশকেও উৎপাদন ভালো ছিল। ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন শ্রমিকেরা। ৯২-৯৩ সালের পর থেকে শুরু হয় দৈন্যদশা। নানা কারচুপির কারণে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে থাকে। বাড়তে থাকে ব্যয়ভারও।

আমিন জুট মিলে উৎপাদিত কার্পেট, জায়নামাজ, চটের বস্তা বিখ্যাত ছিল। বড় ক্রেতা ছিল ইরান। ঢাকা-বাগদাদের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল মধুর। ইরাক-ইরান যুদ্ধের পর সেই বাজার হারিয়ে যায়। নতুন করে বিকল্প বাজার আর সৃষ্টি করা যায়নি। এছাড়াও মিলে উৎপাদিত কম্বল, কাপড়ও বিদেশে রপ্তানি করা হতো।

আমিন জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

১৯৫৪ সালে আমিন জুট মিল প্রতিষ্ঠা হয়। পাকিস্তানের নাগরিক ‘আমিন সাহেব’ মিলটি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করা হয়। স্বাধীনতার পরও প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। ৯০ দশকেও স্থায়ী আর অস্থায়ী মিলে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ছিল। বর্তমানে শ্রমিক রয়েছেন চার হাজার ১২৩ জন। এরমধ্যে স্থায়ী শ্রমিক ১৬২৩ ও অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২৫শ’।
৮১ একর জমির উপর পাটশিল্পটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে অনেক জায়গা বেহাত হয়ে গেছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে বলে জানান এক কর্মকর্তা।

গত ১ জুলাই সরকার পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের অবসর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকেরা এখনো বেতন-ভাতা পাননি বলে জানান। অনেকেই অর্থাভাবে অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান।
জিএম কামরুল হাসান বলেন, ‘আগামী নভেম্বরের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটি, বকেয়া পাওনাসহ শ্রমিকেরা সব ধরনের পাওনা পেয়ে যাবেন।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট