চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হালদা থেকে পানি উত্তোলন: চট্টগ্রাম আসছে বিশেষজ্ঞ টিম

মোহাম্মদ আলী

২২ অক্টোবর, ২০২০ | ১:১৯ অপরাহ্ণ

গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) গত ১৪ বছরে হালদা নদীর পানিকেন্দ্রিক ৫টি রিপোর্ট দেয়। কিন্তু একই সংস্থার হলেও রিপোর্টগুলো একটির সাথে অপরটির কোন ধারাবাহিকতা নেই, সাংঘর্ষিক। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে ওয়াসা প্রকল্পের জন্য দেয়া রিপোর্টের সংশোধন করতে চট্টগ্রাম আসছেন আইডব্লিউএম’র বিশেষজ্ঞ টিম। টিমের সদস্যরা হালদা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে রিপোর্টের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন।
২০০৭ সালে হালদাতে রুই জাতীয় মাছের পুনরুদ্ধার প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রায় ১৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে আইডব্লিউএম একটি রিপোর্ট দেয়। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর মিলনস্থলে পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে হালদা নদীতে প্রত্যাশিত পানির গভীরতা না থাকায় মা মাছ প্রজননের জন্য আসতে পারে না। এছাড়াও নদীতে কিছু গভীর অংশ আছে যাকে কুম বা কুয়া বলে। এ কুমগুলোই হচ্ছে মাছের প্রজননের স্থান। কুমগুলো পানিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। এ দুইটি কারণে নদীতে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৭ ঘন মিটার ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্তকে অপরিকল্পিত এবং পরিবেশের ক্ষতি উল্লেখ করে তখনকার সময়ে হালদা নদী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করে। শেষ পর্যন্ত হালদা নদীর প্রকল্প থেকে ড্রেজিংয়ের অংশটি বাদ দেয় সরকার। এরপর ২০১১ সালে ড্রেজিং নিয়ে আরো একটি রিপোর্ট দেয় আইডব্লিউএম। ওই রিপোর্টে হালদা প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া ড্রেজিং খাতের ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে চানখালী খাল খননে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এতে যুক্তি উপস্থাপন করা হয় যে, চানখালী খালটি ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে ওই খাল থেকে রুই জাতীয় মা মাছ হালদায় আসতে পারে না। কিন্তু ওই সময়ে আইডব্লিউএম এর এই যুক্তির বিরোধিতা করে হালদা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, চানখালী খালটি অনেক ছোট। সেখানে রুই জাতীয় বড় বড় মা মাছের বিচরণ কখনো শোনা যায়নি। তাছাড়া এ খাল থেকে হালদার দূরত্ব অনেক বেশি। সেখান থেকে শঙ্খ ও কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদাতে মা মাছ আসা দুঃসাধ্য ব্যাপার। এরপর চানখালী খালের ড্রেজিংয়ের সিদ্ধান্তটি বাদ দেয় সরকার। যদিও চানখালী খালের ড্রেজিংয়ের পক্ষে রিপোর্ট দিয়ে ওই সময়ে আইডব্লিউএম গবেষণা ফি নেয় ৪৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ২০০৭ সালে হালদা ভরাটের কথা বলে খননের পক্ষে আইডব্লিউএম রিপোর্ট দিলেও ২০১৪ সালে এসে গবেষণা সংস্থাটির ভূমিকা হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ উল্টো। সংস্থাটি ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প, ২০১৬ সালে হাটহাজারীর হালদা-প্যারালাল প্রজেক্ট এবং সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে পানি সরবরাহে ওয়াসার প্রকল্পের জন্য হালদা থেকে পানি উত্তোলনের পক্ষে রিপোর্ট দেয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, রিপোর্ট প্রণয়নের আগে আইডব্লিউএম নদী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যথাযতভাবে মতামত গ্রহণ করেনি। ফলে এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
আইডব্লিউএম’র রিপোর্ট প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ও হালদা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, গত ১৪ বছরে হালদা নদীর পানিকেন্দ্রিক ৫টি রিপোর্ট দেয় আইডব্লিউএম। কিন্তু একই সংস্থার রিপোর্টগুলো একটির সাথে অপরটির কোন ধারাবাহিকতা নেই। গবেষণা সংস্থাটি ২০০৭ সালে হালদা ভরাটের কথা বলে খননের পক্ষে রিপোর্ট দিলেও ২০১৪ সাল থেকে এটির বিপরীত রিপোর্ট দিতে থাকে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প, ২০১৬ সালে হাটহাজারীর হালদা-প্যারালাল প্রজেক্ট এবং সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে পানি সরবরাহে ওয়াসার প্রকল্পের জন্য হালদা থেকে পানি উত্তোলনের পক্ষে রিপোর্ট দেয় সংস্থাটি। ফলে এসব রিপোর্ট নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।’
জানতে চাইলে আইডব্লিউএম’র নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীতে পানি সরবরাহে ওয়াসার প্রকল্পের যে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে তাতে কিছু সংশোধনের জন্য কাজ করবে আইডব্লিউএম। শীঘ্রই চট্টগ্রামে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হবে। সেখানে হালদা সংশ্লিষ্ট সরকারি অধিদপ্তর ও ব্যক্তিদের মতামত নেয়া হবে।’
২০০৭ সালে হালদা খননের পক্ষে আইডব্লিউএম’র রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু সালেহ খান বলেন, ‘ওই সময়ে আমি ছিলাম না। সুতরাং এ নিয়ে কিছু বলতে পারবো না।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট