চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্বপ্নের সরকারি হাসপাতাল নির্মাণে পছন্দের তালিকায় দুটি জায়গা

ইমাম হোসাইন রাজু

২২ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:১৮ অপরাহ্ণ

অবশেষে নগরীর বন্দর-পতেঙ্গার প্রায় ২০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার দ্বার খুলতে যাচ্ছে। শুধুমাত্র জায়গার অভাবেই সর্বদক্ষিণ-পশ্চিমের ছয় ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য এতদিন গড়ে ওঠেনি কোন সরকারি হাসপাতাল। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হলেও জায়গার অভাবেই পিছিয়ে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। তবে এবার ওই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্য দু’টি জায়গা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও পছন্দ হওয়ায় ওই দু’টি জায়গা নির্বাচন করে একটি প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় বলে পূর্বকোণকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।

তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘সম্ভাব্য জায়গা নির্বাচনে গঠিত কমিটি প্রাথমিকভাবে দু’টি জায়গা পছন্দ করেছে। সে দু’টি জায়গাতেই মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল গড়ে তোলার উপযুক্ত। ইতোমধ্যে কমিটির দেয়া প্রস্তাবনাটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ও যদি এ বিষয়ে মতামত দেয়, তাহলে শীঘ্রই এ সংশ্লিষ্ট কাজ শুরু করা হবে। তবে আগে থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের সবুজ সংকেত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।’

এদিকে স্থানীয়রা আশা করছেন এ দুটি জায়গার যেকোন একটিকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করে হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে দীর্ঘদিনের লাঘব ঘুচবে বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষের। তাই প্রস্তাবিত দুটি জায়গার যে কোন একটিতে দ্রুততার সাথে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করারও আহ্বান জানিয়েছেন বন্দর-পতেঙ্গায় হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করা নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দও।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবকে বন্দর-ইপিজেড-পতেঙ্গা অঞ্চলে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চিঠি দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। প্রশাসকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জায়গা নির্বাচনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চলতি মাসের শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ একটি কমিটিও গঠন করা হয়। ওই কমিটি একাধিক জায়গা সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শনও করেছিলেন। কিন্তু ওইসব জায়গা পছন্দ না হওয়ায় পরবর্তীতে খোরশেদ আলম সুজন ও তার গড়া সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে দেয়া ৬টি জায়গার দুটিই পছন্দ হয় ওই কমিটির।

 

জায়গা দুটি হচ্ছে : বন্দর এলাকার পুরাতন পোর্ট মার্কেট সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত ১০ একর জায়গা। এ জায়গার মালিক রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। অন্যটি হচ্ছে- সল্টগোলা রেলক্রসিংয়ের পাশে পরিত্যক্ত আজাদ কলোনি মাঠ। যার পরিমাণ প্রায় ৫ একরের বেশি। এ জায়গার মালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, দু’টি জায়গাতেই হাসপাতাল গড়ে তোলার মতো। তারমধ্যে সিডিএ’র জায়গার উপর দিয়ে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের লাইন প্রবাহিত আছে। হাসপাতাল স্থাপন করা হলে ওই লাইনটিও স্থানান্তর করতে হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রস্তাবনা আকারে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এবার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করতে হবে।’

এর আগেও চলতি বছরের প্রথমদিকে হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাসহ একটি প্রতিবেদনও সরকারের উর্ধ্বতন দপ্তরে পাঠিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু তা ছিল সংশ্লিষ্ট দপ্তরের স্থান নির্বাচনের ভুলে সরকারের মহতী এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। শুধু তাই নয়, সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার প্রায় তিন যুগ পর ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সরকারিভাবে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ এর আগেও একাধিকবার নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোথায় হাসপাতালটি নির্মিত হবে, এ নিয়ে হোঁচট খেতে হয়েছে বার বার। স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবারই প্রস্তাব করা হয়েছে সম্ভাব্য সুবিধাভোগীদের এলাকার অনেক বাইরের জায়গা। যে কারণে স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে যাওয়ার আগেই হাসপাতাল আর আলোর মুখ দেখতে পারেনি।

এদিকে, স্বাস্থ্যবিভাগের প্রস্তাবিত দু’টি জায়গার যে কোন একটিতে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু করার তাগিদ দিয়ে বন্দর-পতেঙ্গায় হাসপাতাল নির্মানের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করা নাগরিক উদ্যেগের ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান মো. ইলিয়াছ পূর্বকোণকে বলেন, ‘বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মহোদয় এ অঞ্চলের মানুষের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। উনার দাবির সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে সরকার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু নাগরিক উদ্যোগের দেখানো দুটি জায়গাই ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের পছন্দ হয়েছে। তাই আমরা চাই দ্রুতভাবেই পরবর্তীতে হাসপাতাল নির্মাণের কার্যক্রম যেন শুরু করা হয়। তা হলে অন্তত এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ‘সেবাবঞ্চিত’৯ থেকে মুক্তি মিলবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট