চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

পার্বত্যাঞ্চলে দুই বছরে ৩৩ খুন

আবুল কালাম আজাদ, কাপ্তাই

২১ অক্টোবর, ২০২০ | ১:১৬ অপরাহ্ণ

আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। সরকার শান্তিচুক্তি করলেও এখনো অশান্ত পার্বত্যাঞ্চল। প্রতিনিয়ত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি থেকে পার্বত্য এলাকায় গত প্রায় দুই বছরে ৩৪ নারী-পুরুষ খুন হয়েছেন। শুধুমাত্র এ বছরের ২৫ মার্চ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত খুন হয়েছেন ১৬ জন। অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর নেতাদের ব্যক্তি স্বার্থের কারণেই খুনোখুনি লেগেই আছে। সর্বশেষ গত ১৩ অক্টোবর রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের ওপর সশস্ত্র হামলায় এক সেনা সদস্য আহত হওয়ার পর পাল্টা হামলায় হামলাকারীদের দু’জন নিহত হয়েছে। নিহত দু’জনই ইউপিডিএফের কর্মী। ঘটনাস্থল থেকে একটি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ১৩ অক্টোবর সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন সেনা সদস্য আহত এবং দু’জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে জেনেছি।
পাহাড়ে সংঘাতের নেপথ্যে : পাহাড়ে আঞ্চলিক চারটি দল থাকলেও তারা দুই ভাগে বিভক্ত। চুক্তির পক্ষের সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং চুক্তিবিরোধী প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এখন এক হয়ে কাজ করছে। অন্যদিকে সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বাধীন জেএসএস (এমএন লারমা) এবং শ্যামল কান্তি চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এক হয়ে কাজ করছে বলে এলাকাবাসী মনে করছে। দুই দশক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সই হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার সঙ্গে এই চুক্তি সই হয়। খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রায় ২ হাজার সশস্ত্র বিদ্রোহী শান্তিবাহিনীর সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন সন্তু লারমা।
তবে ওই চুক্তির বিরোধিতা করে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামেই কালো পতাকা প্রদর্শন করে জনসংহতি সমিতির সহযোগী ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের একটি অংশ। চুক্তির বিরোধিতা করে সন্তু লারমার সংগঠন থেকে বের হয়ে প্রসীত খীসার নেতৃত্বে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গঠিত হয়। ১৯৯৮ সালের ২৬ জুন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা আত্মপ্রকাশ করে।
২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে নানা অভিযোগে সুধাসিন্ধু খীসা ও তারিন্দ্র লাল চাকমার (পেলে) নেতৃত্বে জন্ম হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে পাহাড়ে আরেকটি সংগঠন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ভেঙে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন সংগঠন জন্ম নেয়। এখন পাহাড়ে চারটি আঞ্চলিক দলের তৎপরতা রয়েছে।
চুক্তিবিরোধী সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা বলেন, ‘এটি অসম্পূর্ণ চুক্তি, সেই কারণে আমরা চুক্তির বিপক্ষে ছিলাম। এই অসম্পূর্ণ চুক্তিটি সরকার দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখেছে এবং তারা বাস্তবায়নও করছে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষকে অধিকার দেয়া হলে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত হতো না। চুক্তি নিয়ে আমাদের চার দলের মধ্যে একটি প্রতিশ্রুতি হয়েছিল কেউ আর হানাহানিতে মধ্যে জড়াবে না’।
ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা দোষারোপ করেন প্রসীত খীসার ইউপিডিএফকে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, তারা তখন চুক্তির বিরোধিতা না করলে হয়ত পাহাড়ে আজ চারটি আঞ্চলিক সংগঠন হতো না। পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ হোক এটা আমরা সব সময় চাই। কিন্তু সন্তু লারমার জেএসএস ও প্রসীত খীসার ইউপিডিএফের কারণে এটি বন্ধ হচ্ছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দলের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা প্রতিবেদককে বলেন, ‘পাহাড়ে কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের দল জড়িত ছিল না। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছি’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট