চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

লামায় এক কৃষিপণ্য থেকে টোল আদায় ৪ বার!

লামায় এক কৃষিপণ্য থেকে টোল আদায় ৪ বার!

লামা সংবাদদাতা

২০ অক্টোবর, ২০২০ | ৫:৫৬ অপরাহ্ণ

বান্দরবানের লামায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য, বিভিন্ন মৌসুমি ফল, গরু-ছাগল ও রপ্তানিযোগ্য মালামাল অন্যত্র পরিবহনে একই পণ্য হতে তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ (আজিজনগর, ফাইতং, গজালিয়া) ও বান্দরবান জেলা পরিষদ চারবার টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার গজালিয়া হতে ছিউততলী হয়ে আজিজনগর সড়কের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এসব টোল আদায়কারী ইজারাদার সিন্ডিকেটভুক্ত দালালচক্রের হাতে ব্যবসায়ী কৃষকদের প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি ও অশোভন আচরণের মুখোমুখি হতে হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, কৃষিপণ্য যে ইউনিয়নে উৎপাদিত হবে সে ইউনিয়ন পরিষদ টোল নিবে। পরিবহনের ক্ষেত্রে অন্য ইউনিয়নের উপরে দিয়ে গেলে তাদের পূর্বের দেয়া টোল আদায়ের রশিদ দেখালে তারা আর টোল নেয়ার কথা না। যদি নিয়ে থাকে সেটা অনিয়ম। একটি পণ্য হতে এক ইউনিয়ন পরিষদ একবার ও জেলা পরিষদ একবার টোল আদায় করার কথা।

গজালিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক ক্যাচিমং মার্মা, রেমং মেম্বার পাড়ার কৃষক হ্লায়নু মার্মা, ৮ মাইল মুসলিম পাড়ার কৃষক মো. হানিফ ও আজিজনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ার কৃষক রিহ্লা মার্মা বলেন, একটি পণ্য হতে তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ ও একবার জেলা পরিষদে টোল দেয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে ব্যবসায়ী না আসলে কেউ চাষাবাদ করবে না। চাষাবাদ না করলে আমরা কিভাবে জীবন-জীবিকা চালাব?

তারা আরো জানান, গজালিয়া ও ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের টোল আদায় করে ছিউততলী বাজারে। গজালিয়া ইউনিয়নের টোল আদায় করে শাহজাহান পিসি ও ফাইতং ইউনিয়নের টোল আদায় করে ইজারাদার এমলাক হোসেন। আজিজনগর ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদের টোল আদায় করা হয় আজিজনগর চাম্বী মফিজ বাজারের ইস্টিল ব্রিজের পাশে। আজিজনগর পরিষদের টোল আদায় করে মো. ওসমান ও জেলা পরিষদের টোল আদায় করে আবুল হোসেন বদন। একাধিকবার টোল আদায়ের যাতাঁকলে ব্যবসায়ীদের অবস্থা এখন ‘ত্রাহি মধুসূধন’। একই পণ্য থেকে চার সংস্থার টোল আদায়। এ যেন এক মুরগি তিনবার জবাই করা। বৈশ্বিক মহামারি করোনা কালে যখন পণ্যসামগ্রী বিপণনে ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছেন তখন অতিরিক্ত টোল আদায় তাঁদের কাছে যেন, ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’।

ভুক্তভোগী কৃষকরা দুঃখ করে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে বললে ইজারাদার ও তাদের দায়িত্বরত লোকজন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি ও অশোভন আচরণ করে। নিপীড়নে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। বাইরের ব্যবসায়ীরা এখন পার্বত্য এলাকায় আসতেই চান না। বিভিন্ন সময়ে সিভিল প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় না। একাধিকবার টোল আদায়ের এই সমস্যা লামার অন্যান্য সড়কেও রয়েছে বলে জানা গেছে।

ছিউততলী বাজারে ফাইতং ইউনিয়নের টোল আদায় করেন এমলাক হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের উপর দিয়ে গেলেই টোল দিতে হবে। আমরা নিয়মিত টোল নিচ্ছি।

গজালিয়া ইউনিয়নের টোল আদায়কারী শাহজাহান পিসি বলেন, আমরা টোল নিয়ে রশিদ দিই। এই রাস্তাটি ফাইতং ও আজিজনগরের উপর দিয়ে গেছে। তারাও টোল নেয়। এদিকে আজিজনগর ইউনিয়নে টোল নিয়ে ব্যবসায়ীদের রশিদ না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে।

আজিজনগর বাজারে জেলা পরিষদের টোল আদায় করা আবুল হোসেন বদন বলেন, এইখান দিলে গেলেই টোল দিতে হবে।

গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, একাধিকবার টোল আদায়ের বিষয়টি আমাকে কেউ বলেনি। আমার ইউনিয়ন টোল আদায়ের পরে যে রশিদ দেয়া হয় তা অন্য ইউনিয়নে দেখালে টোল নেয়ার কথা না।

ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, আগে থেকে নেয়া হচ্ছে তাই এখনো নেয়া হয়। আগামী মাসিক মিটিংয়ে (উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা) সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, দেখি আমরা তিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিলে বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/রফিক-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট