চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অরক্ষিত রেলের ‘প্রাণ’

পূর্বাঞ্চল সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড

অরক্ষিত রেলের ‘প্রাণ’

সীমানা প্রাচীর নেই, অরক্ষিত ইয়ার্ডের শতকোটি টাকার সম্পদ

আল-আমিন সিকদার

২০ অক্টোবর, ২০২০ | ৪:৩৬ অপরাহ্ণ

সেবাখাতের মধ্যে যে কয়েকটি খাত সরকার ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রেল। প্রতিবছর রেলের উন্নয়নে হাতে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকার বাজেট। বিনিময়ে এ খাত থেকে কখনোই লাভের মুখ দেখেনি সরকার। যাত্রী খাতে বরাবরই লোকসানে রয়েছে রেল। প্রতিবছরই কমছে আয়। তবে লোকসানের এ ঋণাত্মক সূচি তলানিতে নামাতে না দেয়া খাতটি হচ্ছে রেলের পণ্য পরিবহন খাত।

রেলের আয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৫ বছরে যাত্রী পরিবহন থেকে শুরু করে অন্যান্য মাধ্যমে ধাপে ধাপে আয় কমলেও বেড়েছে পণ্য পরিবহন খাতে। করোনাকালীন রেলের আয়ে ভাটা পড়তে দেয়নি এ পণ্য পরিবহন। তাই এ খাতটিকে বলা হয় রেলের অর্থনীতির প্রাণ।

কিন্তু রেলকে বিলুপ্ত হতে না দেয়া এ খাতটিই এখন অযত্ন আর অবহেলায়। পণ্য পরিবহনের যে ইয়ার্ডটি ব্যবহার করে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে রেল, সেটি রক্ষায় নেই সীমানা প্রাচীর। যার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা। রাত হলেই বাড়ে চোরদের আনাগোনা। চুরি হয় রেল সম্পদ। জনবল সংকট ও সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা।

সম্প্রতি, এ সমস্যা সমাধানে সিজিপিওয়াই এর সম্পূর্ণ সীমানা প্রাচীর ও ১২টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করার অনুরোধ জানিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলীকে (ডিএন-৩) একটি চিঠি দেয় আরএনবির কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ রেলওয়ের এই গুরুত্বপূর্ণ ইয়ার্ডটিতে রয়েছে শত শত খালি ও পণ্য বোঝাই কন্টেইনার, বিটিও (ট্যাংক ওয়াগন), বিসি ওয়াগন ও বিকেএইচ ওয়াগন। যা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে বিপুল পরিমান রাজস্ব আদায় করছে রেল। এছাড়াও এই ইয়ার্ডটিতে রয়েছে একটি লোকোশেড ও ট্রানজিট ইয়ার্ড। তবে যে ইয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিবছর আয় হচ্ছে শত কোটি টাকা সে ইয়ার্ডের সম্পদ রক্ষায় যেন অনেকটাই উদাসহীন সংশ্লিষ্টরা।

ইয়ার্ডটির নিরাপত্তায় নেই সীমানা প্রাচীর, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও ওয়াচ টাওয়ার। যদিও বেশ কয়েকবার সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য টাকা নিয়ে কাজ সমাপ্ত না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছে ঠিকাদার। তাই পুরো ইয়ার্ডের চার ভাগের তিনভাগেই হয়নি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ। যার খেসারত দিতে হচ্ছে রেলকে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় বহিরাগতরা চাইলেই প্রবেশ করতে পারছে রেলের গুরুত্বপূর্ণ এই ইয়ার্ডে। কারণ, এই ইয়ার্ডটির দক্ষিণ পাশে রেলের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে শতাধিক বসতি। এছাড়া রাতের আলোর স্বল্পতাকে কাজে লাগাচ্ছে চোররা। নিয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ ও মালামাল। জনবল সংকটের কারণে এদের ধরতেও পারছে না রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

খোঁজ নিয়ে যায়, সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডের নিরাপত্তায় থাকায় আরএনবির ১৬টি বিটের মধ্যে মাত্র ৬টি বিটে নিয়োজিত আছে নিরাপত্তা কর্মী। একই অবস্থা সিপিএ ইয়ার্ডে (ট্রানজিট)। মাত্র একজন হাবিলদার ও ৩ জন সিপাহী দিয়ে চলছে নিরাপত্তা কার্যক্রম। তাইতো স্বল্প সংখ্যক সদস্য দিয়ে সঠিকভাবে দায়িত্বপালন করতে সম্পূর্ণ সীমানা প্রাচীর, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও ১২টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছে রেলের নিরাপত্তা বাহিনী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরএনবির এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘একেতো সীমানা প্রাচীর নেই তার ওপর বিদ্যুৎ স্বল্পতা। রাত হলেই ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার হচ্ছে না এখানকার আগাছা গুলোও। জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে বলতে পারেন। এত বিশাল এই ইয়ার্ডটি পাহাড়া দিতে যত জনবলের প্রয়োজন তাও নেই। যার সুযোগ নিয়ে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে পারছে এবং যন্ত্রাংশসহ রেলের মালামাল চুরি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মালামাল চুরি হলে জবাবদিহির পাশাপাশি আমাদের সদস্যদের জরিমানাও গুনতে হচ্ছে। তাই এখানে কাজ করতেও চাচ্ছে না কেউ। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরএনবির পক্ষ থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন-৩) বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। যেখানে ১২টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের পাশাপাশি সীমানা প্রাচীর সম্পূর্ণ করার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা।’

এদিকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে বাজেট পাশ হলে এ সমস্যা সমাধানে শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার শাহাদাত আলী।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট