চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চসিক নির্বাচন: ডিসেম্বরে ভোটের চিন্তাভাবনা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৭ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:২৮ অপরাহ্ণ

আগামী ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে তা নির্ভর করছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপর। ডিসেম্বরে করতে না পারলে বিকল্প হিসেবে জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বর্তমান প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। স্থানীয় সরকার আইন মতে, প্রশাসক নিয়োগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরমধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন আইন) ২০০৯ এর ২৫ ধারার ৪ (গ) রয়েছে, সিটি করপোরেশনের মেয়াদোত্তীর্ণের কারণে নিয়োগকৃত প্রশাসক ১৮০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।’
ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। যেদিন থেকে প্রশাসক ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন সেদিন থেকে ক্ষণগণনা শুরু হবে। তবে দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে কমিশন।’ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিন্তাভাবনা করছে কমিশন। এই বিষয়ে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে কথা হয়েছে। তবে তা নির্ভর করছে করোনাভাইরাস ও দেশের পরিস্থিতির উপর। তিনি বলেন, এখন শুধু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। নতুন কোনো তফসিল ঘোষণা করা হবে না। এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের সময় দিয়ে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
আইন মতে, আগামী বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বর্তমান প্রশাসকের ৬ মাস পূর্ণ হবে। এরমধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ এবং দায়িত্ব গ্রহণের সময়-সুযোগ রেখে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। এরমধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করেপারেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ৫ আগস্ট।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ৩৮(১) এর ‘ক’ ধারায় রয়েছে, করপোরেশনের মেয়াদ মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। একই আইনের ৬নং ধারায় বলা আছে, করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে মেয়াদ ৫ বছর হবে। সেই হিসাবে আগামী ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হয়। করপোরেশনের মেয়াদ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল।
নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের মাঠে ছিলেন প্রার্থীরা। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর চসিক নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলবল নিয়ে প্রচার-প্রচারণা প্রচুর লোকের সমাগম হয়ে আসছিল। নির্বাচন স্থগিত করার জন্য কমিশনে আবেদন করেছেন ৫ মেয়র প্রার্থী। নির্বাচন স্থগিত না করলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
গত জুলাই করোনাভাইরাসের কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় কমিশন। এতে বলা হয়েছে, চলতি মেয়াদের মধ্যে চসিক নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ২৫(১) এ উল্লেখ রয়েছে ‘কোন সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদোত্তীর্ণ হইলে, সরকার সিটি কর্পোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যপ্ত উহার কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে।’
করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার আইনের ‘গ’ ধরায় বলা হয়েছে, কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়াদোত্তীর্ণের ক্ষেত্রে ১৮০ দিনের অধিককাল দায়িত্বে থাকিতে পারিবে না।
প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মাঠে ছিল মেয়র পদে সাতজন, কাউন্সিলর পদে ১৬৩ জন ও মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রার্থী। এখন নির্বাচন বাতিল করায় প্রার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট