চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আইআইইউসি ছাত্রের স্বপ্ন লাশ হয়েই ভাসছিল হাতির ঝিলে

আল-আমিন সিকদার

১৫ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

আজিজুল ইসলাম মেহেদী। ২৪ বছরের এই ছেলেটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছিলেন। মেধাবী মেহেদী এরইমধ্যে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস’ এর হয়ে সফর করেছেন মালয়েশিয়া ও কানাডা। এই দুই সফরকৃত দেশের মধ্যে কানাডা বেশ ভালো লেগেছিল মেহেদীর। তাইতো, সেই সফরশেষে পরিবারের সবার ছোট ছেলেটি মা জাহানারা বেগমের কাছে আবদার করে বসেন কানাডায় পড়ালেখা করার। একমাত্র ছেলের এই আবদারের কথা আমেরিকা প্রবাসী বাবা ফখরুল ইসলামকে জানান মা জাহানারা বেগম। আলোচনা করেন মেহেদীর বড় দুই বোন ও তাদের স্বামীদের সাথে। পরিবারের সকলের সিদ্ধান্ত ছিল এক। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করলেই মেহেদীর কানাডা যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।

সেই স্বপ্ন বুকে লালন করে এক এক করে দিন কাটছিল মেহেদীর। কিন্তু এ স্বপ্ন যে স্বপ্নই রয়ে যাবে যেমন ভাবেননি মেহেদী তেমনি তার পরিবারের সদস্যরাও। হঠাৎ করে পুলিশের কাছ থেকে আসা একটি ফোন যেন নিস্তব্ধ করে দিয়েছে পুরো পরিবারটিকে। কারণ ফোনের ওপাশ থেকে জানানো হয়েছিল তাদের একমাত্র আদুরে মেহেদীর লাশ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরাতন লাশ ঘরে। যা শোনার পর কান্নার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে নগরীর আকবরশাহ এলাকার ফিরোজ শাহ কলোনির সি ব্লকের নীল রঙের ৬ তলা বাড়িটি।

নিহত শিক্ষার্থী মেহেদীর দুলাভাই মো. আব্দুর রহমান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘চাকরির ইন্টারভিউ আছে বলে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে গত ১০ অক্টোবর শনিবার বিকাল ৫টার বাসে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয় মেহেদী। ঢাকায় আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের বাসা থাকলেও সে খিলক্ষেতে তার বন্ধু এহছানের বাসায় উঠবে বলে জানায়। রাতে সেখানে পৌঁছেছে বলে ফোনে জানিয়েছিল মেহেদী। পরদিন রবিবার সকালে তার বন্ধু এহছান আমাদের কল দিয়ে জানায় মেহেদী তাদের বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় গেছে তার খোঁজ পাচ্ছে না তারা। এটা জানার পর আমরাও মেহেদীর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সংযোগ বন্ধ পাই। এরপর বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বললেও কোথাও মেহেদীর খোঁজ পাচ্ছিলাম না। এরইমধ্যে খবর পাই, হাতিরঝিল থেকে তার বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মূলত, তিন আত্মীয়ের পাসপোর্ট সংশোধন করতে এহছান ও তার বন্ধুদের আড়াই লাখ টাকা দিয়েছিল মেহেদী। কিন্তু সেই কাজ করতে না পারায় টাকা ফেরত চায় মেহেদী। যা আত্মসাৎ করার জন্য মেহেদীকে খুন করে ওরা।’

মো. আব্দুর রহমানের মত হত্যার পেছনের কারণ সম্পর্কে একই বিবৃতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। পাশাপাশি এ ঘটনার মূলহোতা এহছানসহ মোট চারজনকে আটক করার বিষয়টিও গণমাধ্যমকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন-উর-রশিদ।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাতিরঝিলে বস্তাবন্দী এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার লাশের কিছুটা দূরে পড়ে থাকা একটা কাগজের টুকরায় থাকা একটি ফোন নম্বরের সূত্র ধরে মেহেদীর পরিচয় জানা যায়। মূলত পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য দেয়া টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে নিহত হন মেহেদী। মেহেদীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এহছান ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় এহছানসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিরা হলেন তামিম, আলাউদ্দিন ও রহিম। তারা প্রথমিকভাবে ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এদিকে গতকাল বুধবার নামাজে জানাজাশেষে আজিজুল ইসলাম মেহেদীর লাশ ফিরোজ শাহ কলোনির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট