চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অনলাইন ক্লাসের  রেকর্ড চান চবি শিক্ষার্থীরা

রায়হান উদ্দিন,চবি

১৪ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:৫২ অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত ১৬ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষা কার্যক্রম।
অনাকাঙ্ক্ষিত দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। এরই মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রথম দিকে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকলেও বর্তমানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের বাইরে। তবে প্রশাসন সকল শিক্ষার্থীর কথা মাথায় রেখে ক্লাসের রেকর্ড কিংবা ভিডিও দেয়ার কথা বললেও, ক্লাস রেকর্ডিং-এ অনীহা শিক্ষকদের।
তবে সচেতন শিক্ষকরা বলছেন, অনলাইন ক্লাস রেকর্ড নিয়ে ভয়ে আছেন তাঁরা। শিক্ষকদের দাবি লেকচারটি কিছু খণ্ডিত অংশ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে চলবে নানা ধরনের রাজনীতি। এই আতঙ্ক আরও বেড়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের অহরহ অপপ্রয়োগের কারণে।
জানা যায়, করোনো সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করায় অনেক স্থানে নেটওয়ার্কের সমস্যা বিদ্যমান। তাছাড়া সবার স্মার্ট ফোন নেই। যাদের আছে তাদের সবার পক্ষে প্রতিদিন ইন্টারনেট কেনা সম্ভব নয়। আবার এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না শিক্ষার্থীরা। তাই অনলাইন ক্লাসের ওপর আস্থা রাখতে হচ্ছে তাদের। এমতাবস্থায় প্রতিটি ক্লাসের রেকর্ড থাকলে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় ক্লাস করার সুযোগ থাকছে। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন কাদের রনি বলেন, ‘ক্লাসের রেকর্ড ফেসবুক ও ইউটিউবে আপলোড করা হলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো। যে সকল শিক্ষার্থী নানাবিধ সমস্যার কারণে লাইভ ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, তারা পরবর্তীতে যে কোনো সময়ে ক্লাসের ভিডিও দেখে নিতে পারতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিভাগেই শিক্ষকরা রেকর্ড সরবরাহ করছেন না। এমনকি কিছু বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাসের রেকর্ড না করতে কঠোরভাবে নিষেধ করছেন’।
এ বিষয়টিকে সামনে রেখে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু শিক্ষক অনলাইন ক্লাসের ভিডিও শিক্ষার্থীদের দিলেও কিছু শিক্ষক দিচ্ছেন না। শিক্ষকরা বলছেন, তাদের পাঠদান রাষ্ট্র-সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি ও যৌনতাসহ নানা ধরনের দ্বান্দ্বিক বিষয়াদি নিয়ে। এসব বিষয়ে কারো মতামতের সঙ্গে কারো নাও মিলতে পারে। মতাদর্শিক বিতর্ক তৈরি হতে পারে বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রাধান্যশীল ভাবধারার সঙ্গেও। সেখানে কেউ যদি লেকচারটি কিছু খণ্ডিত অংশ ভাইরাল করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে। এ শঙ্কা বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্প্রতি দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে দুজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাময়িক চাকরিচ্যুতি ঘটেছে একজনের। তাই এই অনলাইন ক্লাসের রেকর্ড চ্যালেঞ্জিং।
রেকর্ডিং-এর বিষয়ে শিক্ষকদের অনীহার বিষয়টি অস্বীকার করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘অনলাইন ক্লাসের রেকর্ডের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সমস্যা ও আইনের ভয় কাজ করছে শিক্ষকদের মধ্যে। অনেক শিক্ষক রেকর্ড করে তা আপলোড করতে ঝামেলা মনে করেন। আবার স্বাধীন ও মুক্তভাবে মত প্রকাশ করে লেকচার দিতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি নিয়েও এক ধরনের চিন্তা আছে। এক্ষেত্রে লেকচারটি কিছু খণ্ডিত অংশ হয়তো ভাইরাল করে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হতে পারে। মূলত এসব কারণে ক্লাসের রেকর্ড চ্যালেঞ্জিং’।
তবে যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে কোনো শিক্ষকের অনলাইনে ক্লাস নিতে এবং তা রেকর্ড করে আপলোড করতে অনীহা থাকার কথা নয় বলে জানিয়েছেন ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম সেকান্দার খান। তিনি বলেন, শিক্ষকদের কাজ শুধু ক্লাসে পড়ানো নয়। পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে তাঁদের মত ও চিন্তা জনসমক্ষে তুলে ধরা। তাই অনলাইন ক্লাসের রেকর্ড জনসম্মুখে প্রকাশ তাঁদের দায়িত্বেরই অংশ। এর মাধ্যমে অবশ্যই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। তবে এক্ষেত্রে আইনের ভয়ও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি বাড়াতে প্রতিমাসে ১৫ জিবি ইন্টারনেট ডাটা বিনা মূল্যে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থে এগুলো করা হয়েছে। আর অনলাইন ক্লাসের বর্তমান পদ্ধতিতে সবাই নতুন, তাই সমস্যা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা যদি চায় আমরা রেকর্ডি-এর বিষয়ে আলোচনা করবো’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট