চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সচল হচ্ছে রেলের অচল সিস্টেম

আল-আমিন সিকদার

১৪ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ

রেলের লেভেল ক্রসিং পার হতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রেনের ধাক্কায় যেমন ছিটকে পড়ছে যানবহন ঠিক তেমনি ট্রেনে কাটা পড়ে প্রতিদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে মানুষ। গত বছরের ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিসংখ্যান বলছে মাসে ১৩ জন মানুষ এতে প্রাণ হারাচ্ছে। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে লেভেল ক্রসিংয়ে। যার ৯০ শতাংশই ঘটছে অননুমোদিত রেল ক্রসিংয়ে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত এসব অননুমোদিত ক্রসিংগুলো যেমন দীর্ঘদিন ধরে মানছে না নিয়মনীতি ঠিক তেমনি খোদ রেলের ক্রসিংগুলোও। এক কথায় রেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটি চলছে ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দারের রাজ্যের মত। ক্রসিং আছে, গেটম্যান নেই, গেটম্যান আছে তো টেলিফোন নেই, টেলিফোন থাকলেও আসে না কল আর রেল চলে যাওয়ার পরেও বাজে না সতর্কতামূলক এলার্ম। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে ৮০ শতাংশ ক্রসিংয়েই নেই এলার্ম, টেলিফোন নেই ৭০ শতাংশ ক্রসিংয়ে। দীর্ঘদিন অচল পড়ে থাকা এই সিস্টেমকে এবার সচল করার চেষ্টায় নেমেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।
পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, পূর্বাঞ্চলে সর্বমোট লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১৩৬৯। এরমধ্যে অনুমোদন রয়েছে ৫৫৮টির এবং অবশিষ্ট অননুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৮১১। অননুমোদিত ক্রসিং ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত হলেও রেলের বৈধ ক্রসিংগুলো পরিচালনায় যে গেটম্যানের প্রয়োজন সেখানেও রয়েছে লোকবল সংকট। ৭৭টি লেভেল ক্রসিংয়ে নেই একজনও গেটম্যান। যে ৪৮১টি ক্রসিংয়ে গেটম্যান আছে সেগুলোর বিপরীতে টেলিফোন রয়েছে মাত্র ৮৬টি। এমনকি ট্রেন আসার পূর্বে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে ক্রসিংয়ে যে সতর্কতামূলক এলার্ম বাজার কথা তাও আছে কেবল ৭৯টা। যার মধ্যে বেশিরভাগই অচল। দুর্ঘটনা এড়াতে এসব অচল ব্যবস্থা সচলের পাশাপাশি লোকবল সংকট মেটাতে এরইমধ্যে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে রেল। নিয়োগ জটিলতা কাটার আগ পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিতে দেয়া হবে নিয়োগ। এমনকি প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ের আগে বসানো হবে ৫ স্তরের স্পিডব্রেকার। দেয়া হবে টেলিফোন সংযোগ এবং বসানো হবে এলার্ম। পাশাপাশি দায়িত্বরত গেটম্যানদের দেয়া হবে মোবাইল ফোন। একই ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অননুমোদিত ক্রসিং গেটগুলোর সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করা হবে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীণ। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে রেল যেমন সকল লেভেল ক্রসিংকে নতুন করে সাজাচ্ছে, প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক লোকবল নিয়োগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে, ঠিক একই ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে অননুমোদিত রেল ক্রসিংগুলোকেও। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করা হবে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার শাহাদাত আলী পূর্বকোণকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে লোকবল সংকটে আমাদের লেভেল ক্রসিং গেটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। কোনো কোনো স্থানে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। কারণ, বেশিরভাগ ক্রসিংয়েই নেই টেলিফোন ব্যবস্থা। এতে করে বাড়ছে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা। শীতে কুয়াশার কারণে এই দুর্ঘটনার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানে আমরা এরইমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সব ক্রসিংয়ে টেলিফোন সংযোগ বসানোর পাশাপাশি বসবে এলার্ম যা পরিচালনায় লোকবল সংকট থাকলেও প্রাথমিক পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ দিয়ে কার্য পরিচালনা করা হবে। চলতি মাসের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে তৈরি করা হবে লেভেল ক্রসিংগুলোকে। এরইমধ্যে সমস্যা চিহ্নিত করতে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়ে গেছে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট