চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৯টি মেশিনারিজ ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ

গাজী ওয়ারস লিমিটেড: সিদ্ধান্ত জাপান, আসছে তাইওয়ানের

মোহাম্মদ আলী

১৩ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

তামার তার তৈরির সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গাজী ওয়্যারস্ লিমিটেডের ৯টি মেশিনারিজ ক্রয় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সংগঠন ‘সিবিএ’। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেশিনগুলো জাপান থেকে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত থাকলেও ওই দেশ থেকে কেনা হচ্ছে মাত্র তিনটি। অবশিষ্ট ৬টি মেশিন আনা হচ্ছে তাইওয়ান থেকে। সিবিএ’র দাবি, জাপানের মেশিনারিজ টেকসই হলেও তাইওয়ানেরগুলো নিম্নমানের। কিছু দিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তাতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন বাড়ানো যায় না। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সিবিএ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ফ্যাক্টরিকে আরো শক্তিশালী ও আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন সাইজের ৯টি মেশিনারিজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় গাজী ওয়্যারস লিমিটেড। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। এজন্য নিজেদের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্তের পর একনেকের অনুমোদনও মেলে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি। মেশিনারিজগুলো জাপান ও তাইওয়ান থেকে দেশে আনার জন্য ইতোমধ্যে এলসি করা হয়েছে। শিপমেন্ট হলে এগুলো দেশে আসবে। তবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে গাজী ওয়্যারস্ এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (সিবিএ)।
সূত্র জানায়, প্যাকেজ-১ এবং প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে এ ৯টি মেশিনারিজ কেনা হচ্ছে। ৯টি মেশিন ক্রয়ের জন্য কার্যাদেশ পায় জাপানের ডায়মন্ড প্রজেক্ট কোম্পানি লিমিটেড। মেশিনগুলো তৈরির প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একই দেশের মেসার্স ফ্রুকাওয়া বুসান কোম্পানি লিমিটেড এবং হোকোয়েটসু ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড। বাংলাদেশে তাদের লোকাল এজেন্ট মেসার্স আহসান এন্টারপ্রাইজ। নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গার সি-বিচ রোডে এ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের সিবিএ’র সভাপতি অলক কুমার দেওয়ানজী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তাফা অভিযোগ করে দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, ‘জাপান থেকে মেশিনারিজগুলো ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হলেও তাইওয়ান থেকে বেশিরভাগ মেশিন কেনা হচ্ছে, যা অত্যন্ত নিম্নমানের। অথচ মেশিনগুলো ক্রয়ের কার্যাদেশ পায় জাপানি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি জাপান থেকে মেশিন না দিয়ে তাইওয়ান থেকে দিচ্ছে। তাইওয়ানের মেশিন তুলনামূলকভাবে জাপানে উৎপাদিত মেশিনের মতো টেকসই হবে না। এর আগে ১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৬টি মেশিনারিজ ক্রয় করা হলেও ৫/৬ বছর পর এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি। অথচ ১৯৬৫ সালে গাজী ওয়্যারস্ লিমিটেড জাপান থেকে মেশিনারিজ ক্রয় করলেও এগুলো বিগত ৫৫ বছর ধরে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে’।
অভিযোগে তারা আরো জানান, ২০১৮ সালে গাজী ওয়্যারস্ লিমিটেড একটি ইতালিয়ান ভি-টাইপ মেশিন ক্রয় করে। সে মেশিনের দরপত্রে লোকাল এজেন্টের জন্য কিছু শর্তাবলী ছিল। লোকাল এজেন্টের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার থাকার পাশাপাশি ৩ শতাংশ ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়েছে। কিন্তু এবার ৯টি মেশিন ক্রয়ে লোকাল এজেন্ট মেসার্স আহসান এন্টারপ্রাইজের জন্য কোন শর্তাবলী রাখা হয়নি। একটি সিন্ডিকেট মেশিনারিজ ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে নিম্নমানের মেশিনারিজ ক্রয়ে সহযোগিতা করছে। লোকাল এজেন্টের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার নেই। নেই কোন অফিসও। এ ক্ষেত্রে মেশিনগুলোর সমস্যা হলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া মেসার্স আহসান এন্টারপ্রাইজকে গাজী ওয়্যারস্ লিমিটেডের ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর পরিবেশক নিয়োগ করা হয়। কিন্ত এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটি এক কেজি পণ্যও ক্রয় করেনি।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে গাজী ওয়্যারস্ লিমিটেডের ৯টি মেশিনারিজ ক্রয়ের প্রকল্প পরিচালক এবং ওই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বাণিজ্যিক বিভাগের প্রধান মো. আক্তার হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘৯টি মেশিনারিজের মধ্যে জাপান থেকে ৩টি ও তাইওয়ান থেকে ৬টি মেশিন কেনা হচ্ছে। এগুলো দেশে আনার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। খুব শীঘ্রই মেশিনারিজগুলো দেশে আসবে। তাইওয়ান থেকে আসা মেশিনারিজগুলো জাপানি পণ্যে তৈরি করা হচ্ছে। সুতরাং মেশিনারিজের টেকসই কম হবে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সত্য নয়। তাছাড়া জাপানি ঠিকাদারের বাংলাদেশস্থ এজেন্ট মেসার্স আহসান এন্টারপ্রাইজের অফিস পতেঙ্গা থেকে নগরীর কাজী দেউড়ি এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি আমাদের চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট