চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চমেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ ক্যান্টিন: পেছনে দুদক, তবু এতো অনিয়ম!

দুদকের অনুসন্ধান চলাকালেই বিনা টেন্ডারে ক্যান্টিন ইজারা

চমেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ ক্যান্টিন: পেছনে দুদক, তবু এতো অনিয়ম!

নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ অক্টোবর, ২০২০ | ৬:০০ অপরাহ্ণ

এমনিতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অনিয়মের অভিযোগ। যেখানে নিয়োগ থেকে শুরু করে পছন্দের ঠিকাদারকে বিভিন্ন টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার মতোও নানান অনিয়মের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। যা নিয়ে গেল সপ্তাহে নিয়োগ- টেন্ডারসহ নানান সংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্য চেয়ে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে এত অভিযোগের মধ্যেই এবার বিনা টেন্ডারেই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ ক্যান্টিন ইজারা দিল কর্তৃপক্ষ।

শুধু তাই নয়, ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে পাওয়া গেছে অনিয়মের অভিযোগ। যেখানে কার্যাদেশে মাসিক ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হলেও ইজারা পাওয়া ব্যক্তি থেকে নেয়া হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাকি দেড় লাখ টাকার হিসেব উল্লেখ নেই সংশ্লিষ্ট কার্যাদেশে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে দাবি করা হয়, টেন্ডার না হলেও নিয়ম অনুযায়ী ক্যান্টিনটি ইজারা দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ক্যান্টিনটি বরাদ্দ পেতে প্রায় ছয়টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করলেও শুধুমাত্র হাসপাতাল প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মচারী ও চতুর্থ শ্রেণি সমিতির নেতাদের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেই পছন্দের এ ঠিকাদারকে ক্যান্টিনটি ইজারা দেয়া হয়। যে কাজটি দীর্ঘ বছর থেকে চালিয়ে আসছে এ চক্রটি। যা নিয়ে দুদকেও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। কিন্তু বারবারেই বিনা টেন্ডারের মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে ইজারা দেয়া হচ্ছে ক্যান্টিনটি।

মূলত ইজারা দেয়ার নামে প্রশাসনের কিছু কর্মচারীর ও সমিতির নেতাদের পকেট ভারি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিলেও, সরকারি হাসপাতালের ফান্ডে জমা পড়ছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। বাকি টাকাই যাচ্ছে সমিতির নেতাদের পকেটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর নতুন করে এক বছরের জন্য ক্যান্টিনটি ইজারা দেয়া হয় ‘মেসার্স মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম’ নামে এক প্রতিষ্ঠানকে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির ও উপ-পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আফতাবুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ইজারা দেয়া কার্যাদেশে বলা হয়, হাসপাতালের মূল্যায়ন ও ক্রয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত হওয়ায় শর্ত সাপেক্ষে এ কার্যাদেশ জারি করা হলো। যাতে ছয়টি শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, ইজারা চুক্তির মেয়াদ চুক্তি সম্পাদনের তারিখ হতে এক বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে। কার্যাদেশ জারির সাত কর্ম দিবসের মধ্যে অবশ্যই দরপত্রের বর্ণনা মোতাবেক তিনশ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে হবে। একই সাথে অগ্রিম তিন মাসের ভাড়া ৯০ হাজার টাকা সিকিউরিটি হিসাবে পরিচালক, হাসপাতালের বরাবর পে অর্ডার করে চুক্তিপত্র সম্পাদনের পূর্বে জমা দিতে হবে।

কিন্তু ইজারা পাওয়া তাজুল ইসলামের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। যেখানে কার্যাদেশে মাসিক ভাড়া ত্রিশ হাজার টাকা উল্লেখ করা হলেও তাজুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, মাসিক ভাড়া ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণের কথা।

তবে টেন্ডার ছাড়া ইজারা কিভাবে পেল, জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘদিন থেকেই ক্যান্টিনটি আমি পরিচালনা করছি, সে হিসেবে আমাকে দেয়া হয়েছে। তাই টেন্ডারে যায়নি তারা। অফিসিয়ালভাবেই তারা সব ব্যবস্থা করেছে।’

কারা করেছে এবং কিভাবে করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অফিসিয়ালভাবে কোটেশনের মাধ্যমে এসব ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।’ তবে কারা এসব ব্যবস্থা করেছেন সে বিষয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।

এসব প্রসঙ্গে জানতে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে টেন্ডার না হলেও নিয়ম অনুযায়ী কোটেশনের মাধ্যমেই ইজারা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর।

তিনি বলেন, ‘কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে তা ইজারা দেয়া হয়। তবে এসব বিষয়ে পরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।’

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট