চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রেলওয়েতেই ‘বন্দী’ ডেমু ট্রেন

আল-আমিন সিকদার

১২ অক্টোবর, ২০২০ | ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে যাতায়াতের জন্য সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয় ট্রেন। আমাদের শহরগুলোতে যেমন প্রতি এক কিলোমিটার পর পর বাসস্ট্যান্ড ঠিক তেমনি সেখানে ৫ মিনিট দূরত্বে রয়েছে এক একটি রেল স্টেশন। মূলত এসব স্টেশনগুলোতে আসা ডেমু ট্রেন ব্যবহার করে শহরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন নাগরিকরা।
হয়ত, এমনই সেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ডেমু ট্রেন আমদানি করা হয়। চীন থেকে আসা এ ডেমু ট্রেনগুলো যুক্ত হয় বাংলাদেশ রেল বহরে। কিন্তু ট্রেনের অবকাঠামোগত জটিলতা ও যাত্রী সংকটে মাত্র ৭ বছরে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের এ প্রকল্প। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী ২০ সেট ডেমু ট্রেনের মধ্যে নিয়মিত চলাচল করছে মাত্র ৪টি।
বাকিগুলো পড়ে রয়েছে বিকল অবস্থায়। এতে করে এ খাতে রেলের আয় হয়েছে মাত্র ২২ থেকে ২৫ কোটি টাকা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কন্ট্রোল বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০ সেট ডেমু ট্রেনের মধ্যে এখন নিয়মিত চলাচল করছে ৪টি ট্রেন। নোয়াখালী-লাকসাম রুটে চলাচল করছে ১টি। একইভাবে লাকসাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট ও ঢাকা-কালিয়াকৈর রুটে চলাচল করছে ১টি করে ট্রেন। এছাড়া আরও ৬টির একটি করে ইঞ্জিন সচল রয়েছে। ডেমু ট্রেনের দু’পাশে দুটি ইঞ্জিন থাকলেও এই ৬টি চলছে এক ইঞ্জিন দিয়ে। বাকি ১০ সেট ডেমু ট্রেন একেবারেই বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এেিদক ৬৩৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে রেল এ খাত থেকে যে আয় করেছে তা দিয়ে ট্রেনগুলোতে কর্মরত গার্ড, চালক আর টিটিই-এর বেতনও হয়নি বলে মন্তব্য করেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা।
এসব কর্মকর্তারা পূর্বকোণকে বলেন, ‘পূর্বাঞ্চলে ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যাত্রী উঠেছেন ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার। যার বিপরীতে রেল আয় করেছে ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এতে গড় হিসেবে প্রতিবছর ডেমু ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কিন্তু ডেমু চালুর কয়েক বছরের মাথায় ইঞ্জিন বিকল ও নানা জটিলতায় এখন বন্ধের পথে ট্রেনগুলো। এতে করে এ খাতে রেলের আয় তো দূরে থাক প্রতিমাসে ট্রেনগুলোতে কর্মরত গার্ড, টিটিই আর চালকদের যে বেতন দিতে হয়েছে তাও উঠেনি।’
রেলের পরিবহন বিভাগের পরামর্শ না নিয়ে এত বৃহৎ একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছে রেল বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পূর্বকোণকে এসব কর্মকর্তারা বলেন, ‘রেলের ম্যাকানিকাল (যান্ত্রিক) শাখা এসব ডেমু ট্রেন কোন প্রকল্প ছাড়াই সরাসরি সরকারের রাজস্ব আয় থেকে ৬৩৪ কোটি টাকার বিনিময়ে চীন থেকে ক্রয় করে আনেন। কিন্তু এ সম্পর্কে রেলের পরিবহন শাখার সাথে পূর্বে কোনো ধরণের আলোচনাই করা হয়নি। এতে করে আমদানি করে এনেই বিপদে পড়তে হয়। ট্রেন চালুর আগেই ডেমুর অবকাঠামোতে আনতে হয় নানান পরিবর্তন। যেখানেও প্রচুর টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এছাড়া এসব ট্রেনগুলো এ দেশে চলাচলের জন্য উপযোগীও নয়। এতে করে বড় অংকের লোকসান গুনতে হবে রেল বিভাগকে।’
এদিকে খুব শীঘ্রই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করে ডেমু ট্রেন সচলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে পূর্বকোণকে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার শাহাদাত আলী।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট