চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও মরিয়ম জাহান মুন্নি

৯ অক্টোবর, ২০২০ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

‘বাজারে ৪২-৪৪ টাকার কমে চাল নেই। চাল ছাড়াও তেল, ডাল, মরিচ ও তরিতরকারি-সবকিছুই লাগামহীন দাম। দিনে ৫শ টাকা আয় না হলে চুলা জ্বলবে না’। আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বললেন আগ্রাবাদ এলাকার রিকশাচালক মো. কামাল। বাজারে চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে কাঁচা সবজি-নিত্যপণ্যের বাজারে কোথাও স্বস্তি নেই। দাম শুধু বেড়েই চলেছে। এতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পূর্বকোণকে বলেন, ‘বাজার তদারকি বা ক্রেতা ঠকানোর বিরুদ্ধে নজরদারি না থাকায় ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। দাম বাড়তির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না’।
২নং গেট ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স কাঁচা বাজারের সভাপতি আলহাজ মো. এয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চাল কেজিতে ২ থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) পামওয়েল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি তিন হাজার টাকা। বুধবার তা ২৮৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সয়াবিন তেলও মণপ্রতি একশ টাকা বেড়ে ৩৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সব ধরনের ডালের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মুগডাল একশ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা, মসুর ডাল ৫৪-৫৫ টাকা থেকে ৫৮ টাকা, চনার ডাল ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়ছে’।
পাইকারি বাজারে দেশি ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকা এবং পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই করছে।
চালের বাজার লাগামহীন : করোনাসংক্রমণের শুরু থেকেই চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশেষ মোটা ও সিদ্ধ চালের দাম দ্বিগুণের কাছাকাছি পর্যন্ত বেড়েছে। চালের লাগাম টেনে ধরতে গত ১৫ দিন আগে সরকার মিল মালিক, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
গতকাল চালের পাইকারি মোকাম চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজারে মোটা আতপ বিক্রি হয়েছে ২০৫০ টাকা, এছাড়া সিদ্ধ চাল ২২৫০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২৪৫০ টাকা, পাইজাম আতপ ২৩৫০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ ২৪ শ টাকা, জিরাশাইল ২৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ১৫ দিন আগেও এসব চালের দাম বস্তাপ্রতি ২-৩শ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন ও সহ-সভাপতি মো. জাফর বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে বৈঠকে মিল মালিকেরা লাভবান হয়েছেন। কিছু চালের দাম উল্টো একশ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে’। খুচরা বাজারে মোটা আতপ ৪৮ টাকা, মোটা সিদ্ধ মানভেদে ৫০-৫৫ টাকা, ইরি আতপ ৪৫ টাকা, জিরাশাইল ৫৮-৬০ টাকা, মিনিকেট আতপ ৫২ টাকা, সিদ্ধ ৫৫-৬০ টাকা, পাইজাম ৫০-৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দুই টাকারও বেশি বেড়েছে।
কাঁচা বাজারে আগুন : স্বস্তি নেই কাঁচা বাজারেও। বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ টাকার উপরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। আলুর দাম রেকর্ড ছাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। গতবছর এ দিনে আলু বিক্রি হয়েছিল মাত্র ২৩ টাকায়। ধনেপাতা ১৭০ টাকা, শিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০শ’ টাকা, কাঁচামরিচ ১৯০-২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ৩০ টাকা বেশি। টমেটো ১২০-১৩০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা, গাজর ১শ’ টাকায়, মুলা ৫০ টাকায়, কাকরোল ৮০ টাকায়, পটল ৮০ টাকায়, ঝিঙ্গা ৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০ টাকায়, তিতাকরলা ১শ’ টাকায়, ঢেঁড়স ৮০ টাকায়, শসা ৬০ টাকায়, বেগুন ৮০ টাকায়, লাউ ৫০ টাকায়, কুমড়ো ৪০ টাকায় ও বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবছরের চেয়ে প্রায় ২০-৩০ টাকা বেশি বিক্রি হয়েছে।
দাম বেড়েছে মাছেরও। কোরাল মাছ ৬শ’ টাকা, লইট্যা ১২০-১৩০ টাকা, চিংড়ি আকারভেদে ৪-৬শ’ টাকা, বাডা ২৮০ টাকা, পাবদা সাড়ে ৫শ’ টাকা, ইলিশ আকার ভেদে ৪শ’ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ১৩০-১৪০ টাকায়, রুই ১৫০-২শ’ টাকায়, কাতল ২২০-২৫০ টাকায়, কই ৪শ’ টাকায় ও শিং সাড়ে ৪শ’, পাঙ্গাস ১২০-১৪০ টাকায়, পোপা মাছ আড়াইশ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাছে কেজিপ্রতিতে দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকায়।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়, লেয়ার ২৪০ টাকায় ও সোনালি ২শ’ টাকায়। ডিমের ডজন ১২০ টাকা, গরুর মাংস হাড়ছাড়া ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা, খাসির মাংস সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট