চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শত কি.মি. বেগে ছুটবে ট্রেন!

আল-আমিন সিকদার

৯ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:৫০ অপরাহ্ণ

নিরাপদ ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের প্রথম পছন্দ রেল যাত্রা। তবে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় ধীরে ধীরে যাত্রী হারাচ্ছে সরকারের এ সেবা খাত। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন ১০০ ইঞ্জিন যাতায়াত করছে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। কোনো ইঞ্জিন ছুটছে যাত্রীদের নিয়ে আবার কোনটি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে। কিন্তু বয়সের ভারে দিন দিন বিকল হয়ে পড়া এসব ইঞ্জিনের কারণে গতি কমে এসেছে রেলে। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না ট্রেনগুলো। কারণ, যতগুলো ইঞ্জিন এখনও পর্যন্ত চলছে তার ৮০ শতাংশই তুলতে পারছে না প্রয়োজনীয় গতি। যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো পরিচালিত হচ্ছে বাকি ২০ শতাংশ ইঞ্জিন দিয়ে। তবুও ২০-৩০ মিনিট পরে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে ট্রেনগুলো। কারণ, শত চেষ্টা করেও ৭০ এর বেশি গতি তুলতে পারছে না যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো। তবে এবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ইঞ্জিন বহরে যুক্ত হচ্ছে কোরিয়ান হুনদাই কোম্পানির ২ হাজার হর্সপাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। যা প্রতি ঘণ্টায় ছুটতে পারবে ১১০ কিলোমিটার (কি.মি) বেগে। পূর্বাঞ্চল রেলের কন্ট্রোল বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে গত ৫ সেপ্টেম্বর ট্রেনের পাংচুয়ালিটি (সময়সূচি) ছিল ৮৬ শতাংশ। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলো ঢাকা পৌঁছেছে ২০-২৫ মিনিট পরে। যার মধ্যে রয়েছে, মহানগর গোধূলী, তূর্ণা-নিশিথা, সোনার বাংলা ট্রেনও। একই দিনে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মেঘনা এক্সপ্রেসও গন্তব্যে পৌঁছেছে প্রায় আধ ঘণ্টা পরে। প্রায় একই অবস্থা ছিল গত ১ সপ্তাহে পূর্বাঞ্চল রেলের সময়সূচিতে।
এদিকে, এ সংকট কাটাতে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয় ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে ইঞ্জিনগুলো। সেখান থেকে খালাস নিয়ে পাহাড়তলী লোকোশেডে রাখা হয়। গত বুধবার রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ইঞ্জিনগুলোর ট্রায়াল রান উদ্বোধন করেন। ক্রমান্বয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনে যুক্ত হবে ইঞ্জিনগুলো। এসব ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত হলে রেলের গতি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে রেলের আয় ।
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তঃনগর ট্রেনগুলো স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন ১৮ থেকে ২২ বগি। কিন্তু পুরনো ইঞ্জিনগুলো দুর্বল হওয়ার কারণে ১৬ থেকে ১৮ কোচের রেক দিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। কন্টেইনার ট্রেনগুলো ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার গতির বেশি চলতে পারে না। নতুন দশটি ইঞ্জিন দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনের স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন ঠিক রেখে বাড়তি গতিতে চলবে। তাই যাত্রীর সেবার মান বাড়বে। কন্টেইনার পরিবহনে গতি বাড়ার কারণে ট্রিপ বেড়ে যাবে। ফলে আয়ও বাড়বে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী ফকির মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে ১৮টি কোচের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করা হয়। সেখানে যে ইঞ্জিনগুলো আমরা ব্যবহার করছি সেগুলো কাঙ্ক্ষিত স্পিড তুলতে পারে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল লাইনে ৮০ কি.মি গতিতে ট্রেন চলার কথা থাকলেও চলছে ৬০ থেকে ৬৫ কি.মি বেগে। প্রতিদিন ১০০টি ইঞ্জিন চললেও এই গতিতে চলার মত ইঞ্জিন রয়েছে ২০ শতাংশ। বাকিগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। এখন নতুন যে ইঞ্জিন এসেছে এগুলোর স্পিড বেশি। ঘণ্টায় ১শ’রও বেশি গতিতে ছুটতে পারবে ইঞ্জিনগুলো। তাই যাত্রীরা যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সম্ভব হবে। একইভাবে মালবাহী ট্রেনে ২৫ থেকে ৩০টি কন্টেইনার থাকায় ২৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারে না আগের ইঞ্জিনগুলো। এখন অন্তত তিনটি নতুন ইঞ্জিন দিয়ে পণ্য পরিবহন করবো। এতে আগে যেখানে ৫০ থেকে ৫৫ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌঁছতো এখন সেখানে ১০ থেকে ১২ঘণ্টায় পৌঁছতে পারবে। ফলে রাজস্ব আদায় অনেক বাড়বে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট