চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘নির্লিপ্ততায়’ কমিশন বাণিজ্য

হিসাবরক্ষকের বিপুল সম্পদ

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৮ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিয়ন পদে প্রথম নিয়োগ। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন হিসাবরক্ষক। ছিলেন সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদকও। শত শত কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় তার হাত দিয়ে। হয়েছেন অঢেল সম্পত্তির মালিক।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বহদ্দারহাট (চট্টগ্রাম আঞ্চলিক) অফিসের হিসাব শাখার হিসাবরক্ষক আবুল কালাম মজুমদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
পাউবো সূত্র জানায়, বহদ্দারহাট আঞ্চলিক কার্যালয়ে টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চাকরি করেছেন কালাম। এ সুযোগে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের বিল পরিশোধে চেক ছাড়ে ‘কমিশন বাণিজ্যে’ লিপ্ত ছিলেন তিনি। কমিশন ছাড়া কোনো চেক ছাড় করতেন না। কমিশন না পেলে নানা অজুহাতে বিল আটকে রাখতেন। দীর্ঘদিন ধরে কমিশন বাণিজ্য চালিয়ে আসলেও নির্লিপ্ত ছিলেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিবিএ’র আঞ্চলিক সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে তার হাতে জিম্মি ছিল পুরো কার্যালয়।
গত মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আঞ্চলিক হিসাব শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম মজুমদারের বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ অভিযান পরিচালনা করে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব ভট্টাচার্য্য জানান, দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে হিসাবরক্ষক আবুল কালাম মজুমদারের বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। অবৈধ অর্থে ফ্ল্যাট ক্রয় করার সত্যতা পাওয়া গেছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় বিস্তারিত অনুসন্ধানের অনুমোদনের জন্য কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
দুদকের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কালামের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হবে।
দুদক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ঘুষের টাকায় কালাম মজুমদার চট্টগ্রামে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। বহদ্দারহাট ফরিদাপাড়া ডিউর‌্যাবল মোরশেদ’ নামে একটি ভবনে কিনেছেন কোটি টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট। চার তলার এ ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন না। ভাড়ায় দিয়েছেন তিনি। বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার সংলগ্ন আবাসিকেও রয়েছে আরেকটি ফ্ল্যাট। দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রতিবেদনেও তার অবৈধ অর্থে ফ্ল্যাট কেনার সত্যতা পেয়েছে।
পিয়ন হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরিতে যোগ দেন কালাম মজুমদার। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। পরে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে হিসাব শাখায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পান তিনি। কিছুদিন তিনি কক্সবাজার উপ-পরিচালকের (অতিরিক্ত) দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে তাকে ঢাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডে বদলি হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তার মোবাইলে একাধিকবার কল দেয়ার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট