চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আসামি সাক্ষী সবাই শুক্কুর

নাজিম মুহাম্মদ

৬ অক্টোবর, ২০২০ | ১:৫৯ অপরাহ্ণ

নামের মিলের কারণে তদন্তে জট বেঁধেছে আনোয়ারার গহিরায় ইয়াবা উদ্ধারের মামলায়। যার বাড়ির পেছন থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে, যাকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে এবং মামলায় যাকে সাক্ষী করা হয়েছে তিনজনেরই নাম আবদু শুক্কুর। যার বাড়ির পেছন থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তাকে আসামি না করার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন হতবাক হয়েছে। ইয়াবা পাচারের অপরাধে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হয়ে ঘরছাড়া আনোয়ারা গহিরার আবদু শুক্কুর। তাঁর দাবি, যে ঘরের পেছন থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে সেই বাড়িতে থাকতো মৃত আবদু শুক্কুরের ছেলে সেলিম। তাকে আসামি করা হয়নি। অথচ মামলায় বলা হয়েছে আমার ঘরের পেছনে টয়লেটের পাশ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। আমাকে এজাহারভুক্ত আসামিও করা হয়েছে। অথচ আমার ঘরে কোনেি অভিযান চালানো হয়নি- পেছনে কোন টয়লেটও নেই!
গত ২৮ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা থানায় কোস্ট গার্ডের সাঙ্গু সিজি স্টেশনের পেটি অফিসার প্রবীর কুমার রায়ের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত দশটায় রায়পুর ইউনিয়নের ঘাটকূল এলাকার মাদক ব্যবসায়ী আবদু শুক্কুরের বাড়ির পেছনে টয়লেটের পাশে মুখবন্ধ একটি সাদা প্লাস্টিকের বস্তার ভেতরে ৯০ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায়। চৌকিদার আবদু শুক্কুরের উপস্থিতিতে এসব ইয়াবা জব্দ করা হয়। মামলায় একই এলাকার মৃত আবদুল মমিনের ছেলে সরোয়ার আলম, মৃত সোলতান আহমদের ছেলে আবদু শুক্কুর ও নুর ইসলামের ছেলে আবদুল মজিদকে আসামি করা হয়। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে মামলার বাদি কোস্টগার্ডের সাঙ্গু সিজি স্টেশনের পেটি অফিসার প্রবীর কুমার রায় বলেন, শুক্কুর আমাদের কাছে এসে বিষয়টি জানিয়েছে। যে ঘরের পেছন থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে সেই ঘরে কোনো লোকজন ছিলো না। আমরা ওখানে কাউকে চিনি না। মানুষের কাছ থেকে শুনে এজাহারে নাম দিয়েছি। আমাদের সাথে তো কারো শত্রুতা নেই। মামলা যেহেতু হয়ে গেছে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে দেখুক। শুক্কুর নির্দোষ হলে চার্জশিট থেকে বাদ দিতে পারেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুক্কুরকে আমরা বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি।
কোস্টগার্ডের চার সদস্য ছাড়াও মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে স্থানীয় চৌকিদার আবদু শুক্কুরকে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে চৌকিদার শুক্কুর জানান, কোস্টগার্ড ইয়াবা উদ্ধার করেছে রাতে। কার ঘর থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে আমি জানি না। ইয়াবা উদ্ধারের সময় আমি ঘটনাস্থলেও ছিলাম না। আমি অসুস্থ। পায়ের মাংসে পচন ধরায় ছয়মাস হাসপাতালে ছিলাম। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারি না। ঘটনার পরদিন সকালে কোস্টগার্ডের সদস্যরা গাড়িতে করে আমাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে সাক্ষী হিসাবে স্বাক্ষর করি। চৌকিদার হিসাবে এ ধরনের অনেক মামলায় আমাকে সাক্ষী হতে হয়। আমাকেও একদিন মরতে হবে। মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব নয়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ঘটনার স্থানের তিনজন পুরুষ ও প্রতিবেশী একজন মহিলার সাথে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বৃষ্টি পড়ছিলো। রাত আনুমানিক দশটার সময় কোস্টগার্ডের সদস্যরা মৃত আবদু শুক্কুরের ছেলে সেলিমের ঘরে অভিযান চালায়। তার ঘরের পেছন থেকে ইয়াবা উদ্ধার করে। পাশের ঘরের সরোয়ার আলম ও সেলিম একই সিন্ডিকেটের লোক। সুলতান আহম্মদের ছেলে শুক্কুরের ঘরের পেছনে ইয়াবা উদ্ধারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পর থেকে সেলিম ও সরোয়ার পলাতক রয়েছে। সেলিমের ঘর তালাবদ্ধ দেখা যায়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরওয়ারের ঘর থেকে র‌্যাব এক লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ারা থানার উপ-পরিদর্শক ইকরাম উজ্জামান জানান, সেলিমের ঘরের পেছন থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে প্রাথমিক তদন্তে এমনটি জানা গেছে। মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। সেলিমকে কেন আসামি করা হয়নি কিংবা শুক্কুর কিভাবে আসামি হলো সবকিছু তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এজাহারে আসামি করা হলেও নির্দোষ কোনো ব্যক্তিকে তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত করা হবে না বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা ইকরাম উজ্জামান।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট