চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এবার চাঁদাবাজি কার্গো ট্রলারে

নওশের আলী খান

৩ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

যুগ যুগ ধরে যা ঘটেনি এখন সেই ঘটনাই ঘটছে পতেঙ্গা এলাকার কর্ণফুলী নদীতে। চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে কার্গো ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। চাঁদাবাজদের নির্যাতন সইতে না পেরে এরইমধ্যে কার্গো ট্রলার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেবে বলে ট্রলার মালিকদের জানিয়ে দিয়েছে।
ট্রলার মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, কাঠের বডির কার্গো ট্রলারের বর্তমান সংখ্যা ১৬০টি। দু’দশক পূর্বে এর সংখ্যা ছিল ৫৪০টি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে এসব ট্রলার বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে। তবে লবণই বেশি পরিবহন করে এসব ট্রলার। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি, কুতুবদিয়া, ধলঘাট, কুঠাখালী, ডুলাহাজারা, পীরখালী, রামখালী ইলিশিয়া ও ্বাঁশখালী এলাকা থেকে লবণবোঝাই করে ট্রলারগুলো বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা, চাঁদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেটের চাতক ও সুনামগঞ্জ এলাকায় গমন করে। এতে একশ টন থেকে চারশ টন ধারণ ক্ষমতার ট্রলার রয়েছে। প্রতিটি ট্রলারে ১২ জন লোক থাকে। একজন সারেং, একজন ড্রাইভার ও ১০ জন লস্কর। পণ্য পরিবহন ভাড়ার এক তৃতীয়াংশ শ্রমিকরা পেয়ে থাকেন ট্রলার মালিক পান তিন ভাগের দুই ভাগ। ট্রলারগুলো লবণ বোঝাই করে প্রথমে কর্ণফুলীর ১১ নং ও ১২ নং ঘাটের মাঝামাঝি অথবা সাইফুর ঘাটের পাশে নোঙ্গর করে থাকে। এরপর রাত ৪ টার দিকে নির্ধারিত গন্তব্যে রওনা দেয়। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকলে কখনো কখনো বিলম্ব ঘটে। লবণে লোহার ক্ষতি হয়। এজন্য স্টিল বডির কার্গোগুলো লবণ পরিবহন করে না। কাঠের ট্রলারেই লবণ পরিবহন করে থাকে।
চট্টগ্রাম জল পরিবহন কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন জানায়, গত মার্চ মাস থেকে কতিপয় ব্যক্তি ১১ নং ও ১২ নং ঘাটের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থানকারী কর্গো ট্রলার থেকে জোর পূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। সশস্ত্র অবস্থায় ট্রলারে এসে প্রতিদিন তারা ট্রলার প্রতি ২ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে শ্রমিকদের নির্যাতন করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অথচ পূর্বে কখনো এ ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি। এক ঘাটে ইজারাদারের নাম দিয়ে এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. মাকছুদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরু উদ্দিন হোসেন লিখিতভাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক, উপ-পুলিশ কমিশনার বন্দর, কোস্টগার্ড সদর দপ্তর চট্টগ্রাম এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদরঘাট নৌ-থানাকে পৃথকভাবে চিঠি প্রদান করেছেন।
এ ব্যাপারে কার্গো ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে জাহাজ চলাচলে যাতে কোন বিঘ্ন যাতে না ঘটে সেজন্যে যুগ যুগ ধরে আমাদের ট্রলারগুলো সাইফুর ঘাটের কাছে নোঙ্গর করে আসছে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে ট্রলার প্রতি করও দেয়া হয়। কিন্তু অতীতে কখনো চাঁদা দাবিতো দূরে থাক ট্রলারের অবস্থান নিয়েও কেউ কোন প্রশ্ন তুলেনি। এখন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রত্যেকটি ট্রলার থেকে চাঁদা আদায় করছে। এমনকি শ্রমিকদের মারধরও করছে। যা খুবই দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ.বি.এম মিজানুর রহমানের কাছে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু চাঁদাবাজির সময় সাথে সাথে জানানোর জন্য তাদের বলা হলেও তারা জানায়নি। এছাড়া এর আগে ঐ এলাকা থেকে চাঁদাবাজির সময় ২ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে নৌ-থানা কনামাত্র ছাড় দেবে না’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট