চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সরবরাহ বাড়লেও কমেনি দাম

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২ অক্টোবর, ২০২০ | ১২:২১ অপরাহ্ণ

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর মিয়ানমারে রপ্তানিমূল্য ছিল কেজিতে ৩৬-৩৮ টাকা। সেই দরে কেনা পেঁয়াজ দেশে আসার পর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে। তারপরও কমছে না পেঁয়াজের দাম। আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাতীয় এ পণ্যটি।
চাক্তাই আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দর থেকে খালাসের আগেই ৬৫ টাকায় বেচাকেনা হয়। পাইকারি বাজারে গতকালও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’
এদিকে, পুরোনো এলসি করা ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব ভারতের আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সেই ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির পক্ষে ভারতের দিল্লির আদালত রায় দিয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এসব পেঁয়াজ দেশে আসলে পেঁয়াজের দাম কমবে বলে জানান আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ এবং খাতুনগঞ্জের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল গতকাল পূর্বকোণকে আমদানিকারক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘দিল্লির আদালত রায় দেওয়ার পর ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব পেঁয়াজ দেশে আসলে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমবে।’
গতকাল দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই মোকামে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৬৫-৭০ টাকা, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০-৭২ টাকা, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৬২-৬৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৭৪-৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদার ও ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ছিল কেজিপ্রতি ৩৬-৩৮ টাকা। তবে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর বিকল্প দেশগুলোও পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল পূর্বকোণকে বলেন, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আসা ২২৮ মে. টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র দিয়েছি। পেঁয়াজ আমদানির জন্য ৩৪৫টি অনুমতিপত্র (আইপি) ইস্যু করেছি আমরা। এর বিপরীতে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯১২ মে. টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এসব আইপি নিয়েছেন আমদানিকারকেরা। তিনি বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে। এতে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো রয়েছে। গত দুই দিনে ১৩-১৫ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে। চাক্তাই আড়তে ঢুকেছে ১০ ট্রাকের বেশি। প্রতি ট্রাকে ১৩ টন করে পেঁয়াজ থাকে। এছাড়াও মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে এসেছে ২২৮ টন পেঁয়াজ।
সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও বাজারে সংকট রয়েছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী নেতা আহসান খালেদ ও জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ এসেছে, তা দিয়ে দেশের একদিনের চাহিদাও মেটানো যাবে না। চাহিদার তুলনায় সংকট থাকায় দাম কমছে না।’
জাবেদ ইকবাল বলেন, আমদানি ও ক্রেতা কম থাকায় এক সপ্তাহ ধরে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম ৭৮-৮০ টাকা থেকে দুই টাকা কমেছে। আমদানি বাড়লে আরও কিছুটা কমবে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর দেশীয় বাজারে হুলস্থুল শুরু হয়। পাইকারি বাজারে ৩৫-৩৬ টাকায় বিক্রি করা পেঁয়াজ দুই দিনের ব্যবধানে ৭০ টাকা ছুঁয়ে যায়। খুচরা বাজারে ৮০-৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর ভারতের সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরে ৩-৪শ পেঁয়াজ বোঝাই ভারতীয় ট্রাক আটকা পড়েছিল। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার পর আটকে পড়া পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে ঢোকার অনুমতি দেয় ভারত। কিন্তু কয়েক দিন আটকে থাকার পর পচে নষ্ট হয়ে যায় সেই পেঁয়াজ। পরবর্তীতে বাকি পেঁয়াজ আর দেশে ঢুকেনি। সেই এলসি করা পেঁয়াজ নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, পুরোনো এলসিতে রপ্তানি করা পেঁয়াজ দেশে আসতে অন্তত আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। বিকল্প দেশ থেকেও আমদানি করা পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। সরবরাহ বাড়ানো হলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট