চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা: ৭৩ দিনে আয় চার কোটি টাকা

বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা: ৭৩ দিনে আয় চার কোটি টাকা

ইমাম হোসাইন রাজু

১ অক্টোবর, ২০২০ | ৫:০৯ অপরাহ্ণ

করোনা পরীক্ষা করে শুধুমাত্র চট্টগ্রামের বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে সরকারের প্রায় চার কোটি টাকা আয় হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে গেল ৭৩ দিনে সনদ প্রদান ও কোভিড-১৯ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই এ আয় পাওয়া যায়। যা প্রথমবারের মতো সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসেবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা স্বাস্থ্য খাতের অন্য বিভাগ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে আয়ের উৎস থাকলেও একমাত্র সিভিল সার্জন কার্যালয়গুলোতে তা নেই। অনিয়মিতভাবে টেন্ডার সিডিউল বিক্রির কিছু আয় হলেও তা খুবই নগণ্য। তবে প্রবাসীদের কোভিড সনদ প্রদানের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ‘ইতিহাসে’ এত বড় আয় বলেও উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ জুলাই থেকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। যাতে ফি নির্ধারণ করা হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। কিন্তু মাসখানেক পর ২৪ আগস্ট থেকে আর্থিক দিক বিবেচনা করে বিদেশগামীদের টেস্ট ফি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকেই মাত্র দেড় হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয় তাদের। যা অদ্যাবধি পর্যন্ত চলে আসছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৭ হাজার ৬৮ বিদেশগামী প্রবাসী করোনাভাইরাস পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেন। যাদের কাছ থেকে ফি বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এরমধ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে তিন কোটি ৯০ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। তবে সামনে আরও পরীক্ষা বাড়লে রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে বলে মত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি রাজস্ব আয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে পূর্বকোণকে বলেন, ‘বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড পরীক্ষার শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত নিবন্ধন ফি বাবদ প্রায় চার কোটি টাকা আয় হয়েছে। প্রতিদিনই বিদেশগামীরা নিবন্ধন করছেন। পরিমাণ বাড়তে থাকলে রাজস্বও বাড়বে।’

এদিকে, মাত্র ৭৩ দিনে প্রায় চার কোটি টাকা আয় হলেও এ বাবদ খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সিভিল সার্জন। বিদেশগামীদের পরীক্ষা শুরুর সময় এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের আপ্যায়নসহ সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বরাদ্দ এসেছে মাত্র দুই লাখ টাকা। যা প্রয়োজনের চেয়ে খুবই অপ্রতুল। তবে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাড়ে ২৭ লাখ টাকার আনুষাঙ্গিক খরচের বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। যাতে যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন, নমুনা সংগ্রহ, নমুনা প্রেরণ, ডাটা এন্ট্রি ও রিপোর্ট প্রদানের কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের আপ্যায়ন, যাতায়াত, বিভিন্ন ষ্টেশনারি, কাগজ, টাকা সংগ্রহের রসিদ ও যাত্রীদের তথ্য ফরমসহ বিভিন্ন খাতের জন্য সর্বমোট ২৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক ও বিদেশগামীদের পরীক্ষা কার্যক্রমের সমন্বয়ক সুজন বড়–য়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ কার্যক্রম চালু হওয়ার পর সিভিল সার্জন মহোদয়ের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জনের অধিক একটি টিম রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এতজন কর্মীর জন্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে আপ্যায়ন বাবদ মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এছাড়া ফরম, সনদ, টাকা সংগ্রহের রসিদসহ আনুষাঙ্গিক খরচও বাড়ছে। তাতে বরাদ্দ এসেছে এক লাখ টাকা। যা সার্বিক বিবেচনায় প্রয়োজনের চেয়ে খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অন্য কোন আয়ের উৎসও নেই। এসব বিষয় বিবেচনা করে আগামী এক বছরের জন্য এসব কার্য সম্পন্ন করতে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ’

প্রসঙ্গতঃ বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে নিবন্ধন করতে হয়। পরবর্তীতে তা পাশর্^বর্তী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নির্দিষ্ট বুথে নমুনা জমা দেন বিদেশগামীরা। যা ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পরীক্ষা শেষে পুনরায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট